জাতীয়জাতীয় সংবাদশীর্ষ সংবাদ

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি ছিল না। আমাদের পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত শক্ত যে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে বিট পুলিশ রয়েছে। খবর শোনার পর স্থানীয় থানার ওসি ড্রেস না পরেই সেখানে দৌড়ে গিয়েছেন।’

রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গত ১৪ ডিসেম্বর (বুধবার) সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সেখানে অবস্থান নেন ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিচারের নামে সামরিক ব্যক্তিদের হত্যার অভিযোগ করেন। ১৯৭৭ সালে সেই ঘটনার ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বাড়িতে যাওয়ার আহ্বান জানান। তাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাড়া দেননি বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। সে সময় ‘নিরাপত্তা জনিত কারণে’ চলে আসতে বাধ্য হন রাষ্ট্রদূত। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেই তথ্য কীভাবে ফাঁস হলো আমরা জানি না। তার অফিস থেকেও ফাঁস হতে পারে। সেখানে কীভাবে খবর পেয়ে কিছু লোক তাদের একটা দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের আমলে কিছু লোককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে তারা জানাতে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি।’

বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ও বাইরে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, সেগুলো যাতে আর না ঘটে সেজন্য আমরা গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়াতে বলেছি। এছাড়া সেখানকার ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে যে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে সেগুলো নজরদারি করার জন্য আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নেতা, যাদের মাঝি বলা হয়; তাদের অনেককে হত্যার দৃশ্য আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। এ বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে আরও সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেটারও ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। শুধু মনিটরিংয়ের জন্য যে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে, সেগুলোর মনিটরিং রুমের কাজ বাকি রয়েছে।’

রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সেখানে একটি হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ চলছে। রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ চলমান রয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ে কাজ করছেন। রোহিঙ্গাদের কর্মক্ষম করে তুলতে ব্র্যাকসহ অনেক এনজিও কাজ করছে।’

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আমরা সবাই কাজ করছি। যাতে তারা দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ অল্প কয়েকজনকে তাদের দেশে নিয়েছে। যা একেবারেই হাতেগোনা (সংখ্যায় কম)। আমরা সবার কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, রোহিঙ্গাদের হারানোর আর কিছু বাকি নেই। সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীদের যেকোনও খপ্পরে তারা পড়তে পারে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ যেকোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *