জাতীয়জাতীয় সংবাদশীর্ষ সংবাদ

‘মানুষের সৃষ্টি বানর থেকে’ এ কথা পাঠ্যবইয়ে নেই

‘বানর বা শিম্পাজি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে’ পাঠ্যবইয়ে এমন তথ্য নেই। বরং পাঠ্যবইয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে, এ তথ্য ভুল। তারপরও ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব পাঠ্যবই থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের পর কিছু সংবাদপত্রেও মিথ্যা তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘পাঠ্যবইয়ে কী আছে আর কী প্রচার করা হচ্ছে তা তুলে ধরুন। সত্য তুলে ধরুন, সঠিকভাবে তুলে ধরুন। বইয়ে লেখা হয়েছে বানর থেকে মানুষ তৈরি হওয়ার ধারণাটি ভুল। অথচ বলা হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। সবাইকে পাঠ্যবই পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টি যাতে না হয় সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল হতে বলেছেন মন্ত্রী।

ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘খুশি আপা’ গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বইটির ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠাষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘খুশি আপা’ গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বইটির ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠা

এনসিটিবি জানায়, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই রয়েছে। এনসিটিবি’র ওয়েবসাইটে বইগুলো আপলোডও করা হয়েছে। এরপরও অপপ্রচার চলছে। গণমাধ্যমেও এই অপপ্রচার চালানোর হচ্ছে বলেও সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডারউইনের তত্ত্বটি পাঠ্যবই থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে, এমন অগ্রিম কথাও লিখেছে একটি সংবাদপত্র।

নতুন প্রকাশিত ২০২৩ সালের মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?’ অধ্যায়ের ৮ নম্বর লাইনে বলা হয়েছে, ‘অনেকে বলেন মানুষের উদ্ভব নাকি বানর থেকে। এ কথা ভুল।’

বইটির ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাং, গিবনের মতো প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে বানর তৈরি হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানান পর্যায়ে। তোমাদের মনে রাখতে হবে, বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি।’

আর ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘খুশি আপা’ গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বইটির ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘নিসর্গ’ প্রশ্ন করছেন ‘খুশি আপা’কে। অংশটুকু তুলে দেওয়া হলো— ‘নিসর্গ: আমি শুনেছি, আমাদের আদি পুরুষ নাকি বানর ছিল। খুশি আপা হেসে বললেন: তাই নাকি? অনেকে মনে করে, বানর আমাদের পূর্বপুরুষ। কিন্তু তথ্যটা সঠিক নয়। বানর আমাদের পূর্বপুরুষ নয়।’

ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠাষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠা

পাঠ্যবইয়ে বিবর্তনের বিষয়টি সহজ এবং স্পষ্ট করা লেখা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’ উল্লেখ করে অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে। একজন সংসদ সদস্য পাঠ্যবইয়ে বিবর্তন নিয়ে সমালোচনা করে তা বাদ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। এরপর সংবাদপত্রেও এমন খবর প্রকাশে এনসিটিবি গণমাধ্যমে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানায়।

এনসিটিবি বলছে, মানুষের উদ্ভব বানর থেকে হয়েছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু নয়, সংবাদপত্রেও এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, “বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকে বিতর্ক-সমালোচনা চলছেই। এসব বইয়ের ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অসঙ্গতি’ অতীতের যেকোনও সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিতর্কের শীর্ষে রয়েছে ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়টি, যেটি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’।”

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ‘নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ক’ সংবাদ সম্মেলন ছিল সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, ‘কেউ কেউ আছেন অন্ধকারে ঢিল মারছেন, হয়তো বই পড়ে দেখেননি কী আছে? কিংবা যারা ইচ্ছাকৃত এগুলো করছেন সেসব বিষয় দেখবার জন্য সরকারে বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা রয়েছেন, আপনারা (সাংবাদিক) রয়েছেন। সেগুলো সবাই দেখবেন। আমাদের কাজ আপাতত যেখানে যেখানে ভুল রয়েছে সেগুলো সংশোধন করা। শিক্ষার্থীদের হাতে সঠিক তথ্যটি তুলে দেওয়া।’

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষ বানর কিংবা শিম্পাঞ্জি থেকে সৃষ্টি তা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে এ কথা ভুল। সংবাদপত্রে এমন মিথ্যা তথ্য প্রচার মানুষকে গুজবের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সে জন্য সবার সচেতন থাকা দরকার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *