জাতীয়জাতীয় সংবাদশীর্ষ সংবাদ

পদ্মা সেতু আমাদের মর্যাদার প্রতীক, অপমানের প্রতিশোধ : কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই সেতু আমাদের সামর্থ ও সক্ষমতার সেতু। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, অন্যদিকে আমাদের যে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিশোধের সেতু। এই সেতুর জন্য শুধু শেখ হাসিনাকে নয় বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালী ফসল। এখানে অন্যদের কারো অবদান নেই। আমরা শেখ হাসিনার আদেশ পালন করেছি নিষ্ঠার সাথে। বঙ্গবন্ধু কন্যা এই সেতু নির্মাণ করে বিশ^কে জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ দুর্নীতি করে না।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে আজ রোববার পদ্মা সেতুর মাওয়া ঘাট প্রান্তে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। আগামী ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সেতু দিয়ে গাড়ী চলাচল করবে। পদ্মা সেতুর স্থায়ীত্ব ধরা হয়েছে ১০০ বছর।
সরেজমিনে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার বুকে দাড়িয়ে আছে পুরো সেতু। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোড়ে সোড়েই। মূল সেতুর লাইট লাগানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু কিছু জায়গায় ধোয়া মোছার কাজ চলছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নিজে সেতুর নামটি শেখ হাসিনা নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এই সেতু নিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের অপমান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কারো নামে এই সেতুর নামকরণ করা হবে না। এই সেতুটি পদ্মা সেতু নামেই হবে। শেখ রেহানাও এ কথাই বলেছেন। শেখ হাসিনা শুধু পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন না, তিনি আগামী প্রজন্ম নিয়ে চিন্তা করেন।
ওবায়দুল কাদের তার অফিস কক্ষের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি মন্ত্রী। আমার রুমে বসে বিশ^ব্যাংকের একজন পাকিস্তানী পরিচালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির দিকে তাকিয়ে বলেন, এই মহিলা মোস্ট করাপটেড। এই ধরনের অপমানজনক বক্তব্য তখন তারা দিয়েছে। শেখ রেহানা, জয়, পুতুল, ববিকেও তারা অপমান করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ^ ব্যাংক পদ্মা সেতু অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জোড় গলায় বলেছিলেন, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবো। সেদিন আমাদের আশে পাশে যারা ছিল তারা অনেকেই বিদ্রুপ করেছে। এটা কি সম্ভব? বিশ^ব্যাংক ছাড়া সম্ভব? আমাকে বলেছে-কি মন্ত্রী কি ধরনের পরামর্শ দিচ্ছো, এটা কি হবে?। বিশ^ব্যাংক আমাদের মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। আমাদের নেত্রী তখন অনড় ছিলেন। তিনি বলেছেন, আমাদের টাকায় একটা পদ্মা সেতু করতে পারবো না! পারবো। আজকে তার বাস্তব রূপ নিয়েছে। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি।
তিনি বলেন, যতই সমালোচনা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমাদের মনোবল তততই সুদৃঢ় হয়েছে। কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ^ব্যাংক আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। যখন তারা ক্ষমা চায় ততদিনে আমাদের সেতুর কাজ শুরু করে দিয়েছি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মন্ত্রী বলেন, ২৫ জুন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সুধী সমাবেশ করা হবে। এখানে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করা হবে। বেলা ১১টার পর শেখ হাসিনা ছয় মিনিটে পদ্মা নদী পারি দিয়ে ওপারে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। তারপর কাঠালবাড়ীতে সমাবেশে শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ^ব্যাংক, ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস, খালেদা জিয়াসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এরকমই নির্দেশ দিয়েছেন।
২১ জেলার গাড়ি ৬ মিনিটে পদ্মা সেতু পারি দিয়ে ঢাকায় ঢুকলে রাজধানীতে যানজট বাড়বে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সংশয় ছিল। সেটা হয়েছে। যানজটও আমরা জয় করতে পারবো।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে অন্তর্ঘাতমূলক আশংকা রয়েছে। গোয়েন্দাদের হাতে কিছু খবর আছে। এই নিয়ে আমাদের আগেও আশংকা ছিল, এখনো আছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, একটা সময় টোল আদায় হবে অটোমেটিক সিস্টেমে। যারা কার্ড করবে তারা সরাসরি চলে যেতে পারবে। তবে এটা করতে একটু সময় লাগবে। এখন নগদ টাকায় টোল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়া, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার, সাখওয়াত হোসেন মুন প্রমূখ।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে দশনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের আগে সেনাবাহিনী মূল সেতু এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা মাইমুনা আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেছে শুনে দেখতে আসলাম। কিন্তু নৌকাতেও সেতুর নিচে যেতে দিচ্ছে না। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। তাও অনেক ভালো লাগছে। গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *