নারীর অগ্রযাত্রা ও সাফল্য

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন: ইইউ

এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশের নারীরাও। এর মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য ঈর্ষণীয়।

সম্প্রতি ঢাকা সফর করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল। তিনদিনের এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এ সময় নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের বৃত্তি প্রদানের প্রকল্পসহ অন্যান্য বিষয়কে স্বাগত জানিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টারিয়ান ক্রিস্টেল লেসভিয়ার বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও দোকান কাউন্টার পরিচালনায় বিপুলসংখ্যক নারীর উপস্থিতি আমাকে অবাক করেছিল। হোটেলেও আমি লক্ষ্য করেছি স্টাফগুলো উভয় জিনের মিশ্রণ, অধিকাংশের মাথা ছিল স্কার্ফবিহীন।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও নারী শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণে বিগত ১০ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ফোরাম (গ্লোবাল জেন্ডার ফোরাম) এর গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স এ বাংলাদেশ ৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। এটি এই দেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর উন্নয়নে দ্বিতীয় অবস্থানে উন্নীত করেছে। যেখানে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১০৮ ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৩তম।

ক্রিস্টেল লেসভিয়ার আরো জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশের নারী বিচারপতি ও নারী আর্মি মেজর জেনারেল নিযুক্তি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের খবর তাদেরকে বিস্মিত করেছে। তিনি বলেন, যদিও আমাদের ইউরোপের জন্য এটি স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু একটি দরিদ্র ও ক্রমবর্ধমান ইসলামী মৌলবাদী পন্থী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জন্য যা কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন।

তিনি আরো বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বৃহৎ সংখ্যক নারীর এমন কর্মশালা রয়েছে, যা একটি সামাজিক শৃঙ্খলার ইঙ্গিত; যা নারীর জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিরাপদ এবং যেখানে লিঙ্গ বৈষম্য সীমিত।

বৈঠকে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষিত নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০ মিলিয়ন বাংলাদেশি নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩ মিলিয়ন তৈরি পোশাকখাতে নিযুক্ত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৫৭ হাজার নারী উদ্যোক্তাদেরকে ৮৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালে ১১ হাজার নারী ১.২ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষুদ্র ঋণ পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল নারী সমাজ প্রতিষ্ঠার বিষয় সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন। নানা ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি মাদার তেরেসা পুরস্কার, ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার এবং গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।

‘নারীর প্রতি সহানুভূতি’ আন্তর্জাতিক অধিকার আইন, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থায় মানবাধিকার ও মৌলিক মূল্যবোধের বিষয়। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টাকে ইইউ স্বাগত জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *