আন্তর্জাতিকপ্রধানমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

দিল্লি সফরে সাড়া ফেললো শেখ হাসিনার ‘জামদানি কূটনীতি’

ভারত সফরের তৃতীয় দিনে দিল্লিতে দুদেশের শীর্ষ বণিকসভার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পপতিদের বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এটা এতক্ষণে সবারই জানা। কিন্তু পাশাপাশি গোটা সফরে তিনি নীরবে আর একটি বাংলাদেশি পণ্যের অসাধারণ বিজ্ঞাপন করে গেছেন, তা হল ঢাকা-সোনারগাঁওয়ের বিখ্যাত জামদানি শাড়ি।

দিল্লিতে তিন দিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সর্বত্রই জামদানি পরে এসেছিলেন— আর সেই শাড়ির সৌন্দর্য, বুনট আর ডিজাইন ভারতে সবারই নজর কেড়েছে। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা একজন সাবেক কূটনীতিবিদ তো বলেই ফেললেন, ‘জানি না কোন তাঁতি তার জন্য এই শাড়িগুলো বানান, কিন্তু গুণমানে এর চেয়ে ভাল যে জামদানি যে আমি কখনও দেখিনি তা নির্দ্বিধায় বলতে পারি!’

ভারতে বাংলাদেশি জামদানির প্রচার বা বিপণনের জন্য শেখ হাসিনাই যে ‘সেরা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ – তা নিয়েও কোনও দ্বিমত নেই দিল্লির গুণগ্রাহী মহলে।

ঘটনাচক্রে শেখ হাসিনা যেদিন দিল্লিতে পা রাখলেন, তার দুদিন আগে থেকেই শহরের ক্র্যাফটস মিউজিয়ামে ‘এক্সিম বাজার’ আয়োজন করেছিল একটি আন্তর্জাতিক মেলার, সেখানে বাংলাদেশি শাড়ির বিপুল সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিল্পীরা।  ৩ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ব্যাপী সেই প্রদর্শনী তথা বিক্রয়কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় ছিল বাংলাদেশি স্টলগুলোতে।

ঢাকা-সোনারগাঁওয়ের জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁত, জামালপুরের নকশীকাঁথা – বিভিন্ন জেলা থেকে এই ধরনের শাড়ির পসরা নিয়ে এসেছিলেন বিক্রেতারা। দিল্লিতে শাড়ির সমঝদারদের কাছে তারা যে ধরনের সাড়া পেয়েছেন তাতে তারা অভিভূত। কেনাকাটা তো করেইছেন, অনেক বাল্ক অর্ডারও সেখানে পেশ করেছেন ভারতীয় ক্রেতারা।

বাংলাদেশের জয়িতা ফাউন্ডেশনও স্টল দিয়েছিল এক্সিম বাজারে, তাদের ম্যানেজার তো বলেই ফেললেন নকশীকাঁথা বা জামদানি যে দিল্লিতে এতটা হইচই ফেলবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি।

দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা সাগরিকা চ্যাটার্জি টিভিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জামদানি দেখে এতটাই মুগ্ধ যে মেলার শেষ দিনে তিনি সোজা চলে এসেছিলেন এক্সিম বাজারের বাংলাদেশি স্টল থেকে জামদানি কিনতে। ‘প্রধানমন্ত্রীর পরনে ওই অসাধারণ শাড়িটা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না, চলেই এলাম’, হাসতে হাসতে বলে ফেলেন তিনি।

সামনে দূর্গাপুজো আসছে, চিত্তরঞ্জন পার্কের বঙ্গীয় সমাজ প্রাঙ্গণেও জামদানির বিশাল সম্ভার নিয়ে আসছেন বাংলাদেশি তাঁতি ও আর্টিজানরা।

আর এক এক বেলায় এক একটা অনবদ্য জামদানি পরে নীরবে সেই শাড়ি কূটনীতির সলতে পাকানোর কাজটা করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *