যে কোন দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে।
তিনি বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।’
সিলেট সার্কিট হাউসে আজ সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ অন্যদের তুলনায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান, যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেননি এবং ওই এলাকার ছবি তাঁকে পাঠিয়েছেন যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে।
‘সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে,’ বলেন তিনি।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়া, বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩শ’ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ।
অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন।
১৯৯৮ সালের বন্যার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা সহজে এসব খাবার কয়েকদিন সংরক্ষণে রেখে খেতে পারেন।
তিনি এই অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় যে কোনভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন এবং বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইন বিতরণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের মতো হাওর এলাকায় রাস্তার মাটি ভরাটের পরিবর্তে উঁচু রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যাতে এ ধরনের দুর্যোগের সময় গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা যায়।
কুশিয়ারা নদীর ড্রেজিং এবং নাব্যতা বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষায় তিনি একবারের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পক্ষে কিন্তু নদীর নাব্যতা নিশ্চিত করতে বছর বছর সেখানে রক্ষণাবেক্ষন ড্রেজিং করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বৃহত্তর সিলেট জেলার অধিকাংশ বাড়ি ঘরের সামনেই বড় বড় ড্রেন এবং বিল ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সে ধরনের কোন ড্রেন বা জলাশয় এখন আর নেই বরং জায়গাগুলো বিভিন্ন বাড়ি-ঘর ও স্থাপনায় দখল হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের অবস্থাও এই সিলেটের মতোই।
তিনি বলেন, ‘এটা মাথায় রেখেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকা- চালাতে হবে।’
বন্যার সময় খাদ্যের গুদামে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে এবং খাদ্য ভান্ডার থেকে যাতে সহজে পরিবহন করা যায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
বন্যার সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঝড় ও বন্যার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় মূলত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর মতো নতুন কোনো দুর্যোগ এড়াতে।
পানি নামতে শুরু করলে ডায়রিয়া ও জ্বরের মতো সংক্রামক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সিলেট অঞ্চলের পুরো বন্যা কবলিত এলাকা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি।
দেশের মাঝামাঝি অংশে বাংলা শ্রাবণ মাসে বন্যা হতে পারে এবং দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসে বন্যা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো সিলেট অঞ্চল পরপর তিনবার বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই বন্যাই শেষ নয়। কাজেই বন্যা মোকাবেলায় আমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’
তিনি বন্যার সময় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে ল্যান্ড ফোন লাইনগুলো সক্রিয় রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বন্যা দুর্গত এলাকায় সময় মতো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সোমবার তিনি জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি সিলেট যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারে খুব নীচ দিয়ে সিলেট, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকদের কাছে তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা হস্তান্তর করেন এবং পরে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী ও বিতরণ করেন।
তথ্য ও সম্পচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পনি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, সিনিয়র পানি সম্পদ সচিব কবীর বিন আনোয়ার এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সার্কিট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামকরণ করা শিশুপুত্র ‘প্লাবন’-এর একটি ফ্রেমবন্দি ছবি তুলে তাঁর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই গত ১৮ জুন সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জের ডিসি অফিসের আশয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখেন।
পৌর এলাকা মল্লিকপুরে বাসিন্দা জমিলা খাতুন প্রসব ব্যথা নিয়ে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা আটকে পড়েন। পরে প্রশাসন তাকে একটি ছোট নৌকায় করে সুনামগঞ্জের ডিসি অফিসের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে যেখানে শিশুটির জন্ম হয়।