প্রধানমন্ত্রী

দক্ষ আইনজীবী ছিলেন ফজলে রাব্বী : প্রধানমন্ত্রী

ফজলে রাব্বী মিয়ার শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিনি দক্ষতার সঙ্গে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফজলে রাব্বী মিয়া একজন দক্ষ আইনজীবী ছিলেন। তিনি আইন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন।’

গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে সংসদে উত্থাপিত শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনা শেষে শোকপ্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। চলতি সংসদের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গ্রহণের পর রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। এর আগে ফজলে রাব্বীসহ মৃত্যুবরণকারীদের সম্মানে দুই মিনিট নীরবতা পালন ও মরহুমদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ফজলে রাব্বী মিয়া ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দল পরিবর্তন করেও কিন্তু জয়ী হন। একটি জায়গা থেকে বারবার জয়ী হওয়া অর্থাৎ তার নিজস্ব জনপ্রিয়তা, মানুষের সঙ্গে তার গ্রহণযোগ্যতা সেটা অতুলনীয়। যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তিনি অর্জন করতে পেরেছিলেন।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘ফজলে রাব্বী মিয়া সাতবার এই সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার ছাত্র রাজনীতি থেকে যাত্রা শুরু। তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। এরপর যুবলীগ করেছেন। আওয়ামী লীগ করেছেন। একটা সময় তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। সেখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় পার্টির এমপি থাকার সময় আমার সঙ্গে মঝেমধ্যে তার দেখা হতো কথা হতো। তিনি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসতে চাইতেন। আমি তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম। বলেছিলাম আপনি আসেন। আসল জায়গাটিতে চলে আসেন। তিনি ঠিকই ফিরে এলেন। তাকে আমরা ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করলাম।’

তার নির্বাচনী এলাকা বন্যাকবলিত ও দুর্ভিক্ষপীড়িত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ওই এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের যে অঞ্চলগুলো মঙ্গাপীড়িত ছিল গাইবান্ধা তার মধ্যে একটি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের ফলে কখনো মঙ্গা দেখা দেয়নি। আমরা এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করছি। নদীভাঙন রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। তবে আরও উন্নয়ন দরকার। সংসদে তিনি নিজের এলাকার উন্নয়নে কথা বলতেন। তার মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ, একজন সামাজিক মানুষের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির। দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। সর্বশেষ তিনি আমেরিকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রতিদিন তার স্বাস্থ্যের খবর পেতাম। সত্যি কথা বলতে হাসপাতাল থেকে ভালো খবর কখনো আসেনি। আস্তে আস্তে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে কষ্ট নিয়েই তিনি চলে গেছেন। আমরা ভালো দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হারালাম। এই মৃত্যু দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি হলো।’

শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মাহবুব আরা গিনি, আ স ম ফিরোজ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা। ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরও যাদের নামে শোকপ্রস্তাব আনা হয়: ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ছাড়াও সাবেক গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম আবু ছালেহ (৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচন, তৎকালীন সাতকানিয়া-কুতুবদিয়া-চকরিয়া, এন-ই-১৬০ আসন), সাবেক সংসদ সদস্য আব্বাস আলী মন্ডল (তৃতীয় সংসদ, জয়পুরহাট-১ আসন), সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন ভরসা (পঞ্চম সংসদ, রংপুর-১ আসন এবং সপ্তম ও অষ্টম সংসদ, রংপুর-৪ আসন), সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শোয়েব (চতুর্থ সংসদ, দিনাজপুর-৫ আসন) এবং সাবেক সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হকের (দশম সংসদ, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫০) মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব আনা হয়।

এ ছাড়াও স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাস ও শিল্পকলা বিশারদ এবং জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এনামুল হক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম খান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ নৌ অভিযান পরিচালনাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক সচিব এটিএম শামসুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল বোস, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, কুডিগ্রামের চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর বিক্রম শওকত আলী সরকার, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বদরুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুস সালেহীন, দেশের সিনেমা ও নাট্যাঙ্গনের বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অমিত হাবিবের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে, রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে ক্রেন দুর্ঘটনায়, শ্রীমঙ্গলে টিলা ধসে, তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ ও মারদিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায়, আফগানিস্তানে বন্যায় এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সংসদ গভীর শোকপ্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *