২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি অনুমোদন
জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ (এনইসি) পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্ছ বরাদ্দের পাশাপাশি সরকারি তহবিলের অপব্যবহার রোধ করে সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আজ আগামী অর্থ-বছরের (২০২৩) জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র অনুমোদন দিয়েছে।
এনইসি চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ নগরীর শের-এ-বাংলা নগর এলাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষ এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় অংশ গ্রহণ করেন।
বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, আগামী অর্থবছরের মূল এডিপি হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকার, যার মধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে এবং বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে।
এছাড়া আগামী অর্থবছরে স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রকল্প বাবদ নিজস্ব বরাদ্দ থাকবে ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফলে আগামী বছরের এডিবির মোট আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা পওে হ্রাস করে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় করা হয়। সুতরাং চলতি অর্থবছরের মূল এডিবির তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরের এডিবি প্রায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি এবং বরাদ্দের দিক থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
নতুন এডিপিতে ১ হাজার ৪৩৫টি প্রকল্প রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৪৪টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১০৬টি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রকল্প রয়েছে ৮৫টি।
এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কিছু নির্দেশনার উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারিখাতসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে পানি ও বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপচয় রোধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের কঠোরতা বজায় রাখতে হবে এবং কোনো কিছুর অপব্যবহার করা উচিত নয়। আমরা যদিও একেবারে সঠিক পথে আছি, তারপরও অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। প্রবৃদ্ধির বর্তমান গতিময়তা ধরে রাখার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী।’
মান্নান বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন, যেগুলো জনগণ ও দেশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এছাড়া, তিনি সকল পর্যায়ে সরকারি তহবিলের অপব্যবহার রোধ করার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় জানানো হয়েছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ একবারে শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ আরও বাড়বে। এতে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পায়রা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে আগামী জুন মাসে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সময়সূচি অনুযায়ী চলছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু জনবান্ধব সরকার, তাই জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সবসময় কাজ করা হয়। সাধারণ মানুষকে খুশি করার চেষ্টা সবসময় থাকে।
বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আগামী অর্থবছরে সরকারের সম্ভাব্য করণীয় কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই অপচয় রোধের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যয় করার চেষ্টা করবে। ‘আমরা সতর্ক আছি, কিন্তু কোন কিছুতে ভীতু নয়।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগামী দিনে বৈদেশিক ঋণ প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে, কারণ এখন অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হলেও সার্বিকভাবে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
নতুন এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি, শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮১ কোটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি, কৃষি খাতে ১০ হাজার ১৪৪ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু, পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৯৫ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৪০৭ কোটি এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।