কথা রেখেছেন শেখ হাসিনা
বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার দিয়ে শুরু। এরপর চট্টলাবাসী দেখেছে একের-পর এক উন্নয়ন। কখনো উদ্বোধন হয়েছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। কখনো দেখেছে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ঘেঁষে আউটার রিংরোড। বর্তমানে নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও দুটি মেগা প্রকল্প।
এর মধ্যে রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যেটি দিয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে একটানে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছানো যাবে। এছাড়াও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারে যুক্ত হচ্ছে রেললাইন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই চট্টগ্রামের উন্নয়ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কথা রেখেছেন তিনি। চট্টগ্রামজুড়ে তার আগ্রহে একের পর এক উদ্বোধন হয়েছে নতুন নতুন মেগা প্রকল্প। সম্প্রতি শেখ হাসিনার হাত ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়নের ডামাডোলে যোগ হলো নতুন এক পালক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। যা উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই টানেলকে ট্রামকার্ড বানাতে পারে আওয়ামী লীগ। কারণ উদ্বোধনের আগেই চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে এই টানেল ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ। এক পলক দেখতে ছুটে যাওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে নিয়েছেন। তিনি কথা রেখেছেন। টানেলের যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম। আজকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি মডেল টাউনে পরিণত হতে চলেছে। এ দেশের মাটি ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তার কন্যার সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন দর্শনের ফলে। একের পর এক ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ এরিয়ায় আউটার রিংরোড, গোটা চট্টগ্রামজুড়ে প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, বাণিজ্যিক পরিবেশ নিশ্চিত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ নানা উন্নয়নের সুফল চট্টগ্রামের মানুষের ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ায় আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই জনগণ রায় দিয়ে দেশের এই অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করবে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরদিন থেকে জনসাধারণের যান চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা।
নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।