জাতীয়

চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন : হাছান

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে সেদেশের  প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং আজ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সব বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অব্যহত ভাবে সহযোগিতা করে যাবে জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চা ।
আজ স্থানীয় সময় বিকেলে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’এ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনের এ আগ্রহের কথা জানান শি জিনপিং।
বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায়, উন্নয়ন অগ্রগতিতে চীন অব্যহত ভাবে সহযোগিতা করে যাবে।
তিনি বলেন, তার দেশ আরও অব্যহত ভাবে, আরও বেশি করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, কম সুদে ঋণ এবং বাণিজ্যিক ঋণ; এই চার ক্ষেত্রে  সহযোগিতা করবে চীন।
এ বিষয়ে দুই দেশের টেকনিক্যাল কমিটি যৌথ ভাবে কাজ করবে। শিগগির ইচীন থেকে টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়ে বৈঠক আলোচনা হয়।
গত কয়েক দশকে চীনের যে অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়ন আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা উৎস।
পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বিভিন্ন আইকনিক স্থাপনা নির্মাণ, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেন শেখ হাসিনা।
চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সেখানে যাতে চীনের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং আইটি ভিলেজগুলোতে চীনের বিনিয়োগ আহ্বান করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করবেন।
আমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির বিষয়ে আগ্রহ পুর্নব্যক্ত করেন শি জিনপিং।
আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীনের কুটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি। এটিকে সামনে রেখে দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক, বিদ্যমান গভীর সম্পর্ককে দ্বিতীয় পর‌্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন শি জিনপিং।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীরতর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীরতর করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শি জিনপিং বলেন, সুশাসনের জন্য ভালো দল দরকার।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তোলার আগেই শি জিনপিং নিজেই এ বিষয়ে কথা বলেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি জানি বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে আশ্রয় দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন বাংলাদেশ সর্বতোভাবে সহায়তা করবো।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শি জিনপিং বলেন, চীন মিয়ানমার সরকার এবং প্রয়োজনে আরাকান আর্মির সাথেও তারা যোগাযোগ করে এই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ওয়ান চায়না নীতির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন শি জিনপিং। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন।
শি জিনপিং বলেন, কোন দেশের অভ্যন্তরিণ বিষেয়ে চীন হস্তক্ষেপ করে না। আমরাও চাই না কারো অভ্যন্তরিণ বিষয়ে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করুক।
আন্তর্জাতিক ফোরামে চীন ও বাংলাদেশ এক সঙ্গে কাজ করবে জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা এক সঙ্গে কাজ করবো এবং বিশ্ব শান্তি এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এবং চীন এক সঙ্গে কাজ করবে।
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *