মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি গ্রেফতার
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেসুর রহমান মুকুলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
এ ঘটনায় শহীদ ইউনুছ আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠান। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা রুজু হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরে ২০১৭ সালে অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন ও মোখলেছুরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মামলার অভিযুক্ত দুই আসামি রায়ের আগেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া গত ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন ও মোখলেছুরসহ সাত জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত নকিব ও মোখলেছুর ২০১৫ সালে মামলার তদন্তকাজ শুরুর পর থেকেই পলাতক ছিল। পরে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতার এড়াতে নাকিব রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং মোখলেছুর আশুলিয়া ইপিজেড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। তারা দুই জনেই একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করে। এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তারা অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। তাদের দুজনের পরিবারই আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে তাদের নিয়মিত টাকা পাঠাতো। আত্মগোপনে থাকাকালে তারা সাধারণত জনসমাগম, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতো। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।