বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা ও চক্রান্ত কাটিয়ে উঠতে দেশবাসীর সহায়তা কামনা প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে তার সরকারকে সাহায্য করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের ঘৃণ্য রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সঙ্কট আসবে। সঙ্কটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশি^ক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দআমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি ঊর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।’
মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে আজ জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত চক্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘ জনগণ বয়কট করার পর অগণতান্ত্রিক পন্থায় তারা এখন ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও এদেশে একাত্তরের ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধরেরা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ¦ালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাঁদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। এখন দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান – উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দ-প্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থপাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?
তিনি বলেন, দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামাত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা চালায়। বিএনপি’র দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামাত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের অতীত ইতিহাস দেখুন। এদের একটা অংশ (জামাত) শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।
তিনি বলেন, আরেকটি দল (বিএনপি) যার জন্ম ও লালন-পালন সেনানিবাস থেকে কোন এক জেনারেলের পকেটে, সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উর্দি গায়ে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং অফিসারকে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের প্রত্যক্ষ মদদে হরকাতুল জিহাদ, বাংলাভাই, জমায়িতুল মোজাহিদিন ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠে। ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি বেঁচে গেলেও সেদিন ২২ জন নেতাকর্মী মারা যায়। তারা ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০-এর বেশি স্থানে বোমা হামলা চালায়।
বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে সারা দেশে বিএনপি-জামাত অগ্নি এবং পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসীরা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধবংস করে। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা আমরা কখনই চাই না। বৈশি^ক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ^স্ত করতে চাই, বিশ^ বাজারে জ¦ালানি তেলসহ কোন জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করবো। তাঁর সরকারের বিগত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২,৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ ভাগে। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছি। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে। তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু। গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক ৪ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শীঘ্রই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আমরা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছি এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি। তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য আমরা আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী অযথা গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে পুনর্বার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে। করোনা ভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে, সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংকে টাকার কোন ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মত উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার; যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেতো, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোন কোন দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি পরিবারকে টিসিবি’র ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়েছি। এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন। ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছেন। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার শয্যা বৃদ্ধি করেছিলাম। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা জন্য পিপিই, রোগীর জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধসহ সকল উপকরণ সরবরাহ করা হয়। টিকা পাওয়ার উপযোগী সবাইকে বিনামূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে উল্লেখ করে দলটির প্রধান বলেন, আমরাই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিলাম। এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজের সকল অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যেমন, হিজড়া, বেদে, হরিজন, সুইপার, চা শ্রমিক – এদের জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তিনি বলেন, মুজিববর্ষে আমরা ঘোষণা করেছি কোন মানুষই আশ্রয়হীন থাকবে না। সেজন্য আমরা ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহর থেকে গ্রাম – প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে, সকলের ঘর আলোকিত হয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষা, ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে। ২ কোটি কৃষক কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়ে স্বল্পমূল্যে সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করতে পারছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর, ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল। তিনি বলেন, বিজয় দিবসে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ ও সেসব দেশের জনগণ, ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর সদস্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচিছ। কৃতজ্ঞতা জানাচিছ ভারতের তৎকালীন সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে- যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করবো।