সোনামণিদের মাঝে এলেই ছোট্ট রাসেলকে খুঁজে পাই: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্কাউটদের মাঝেই সুপ্ত আছে দেশের ভবিষ্যৎ। ছোট্ট সোনামণিরা, যখনই আমি তোমাদের মাঝে আসি, আমার ছোট্ট শিশু ভাই, মাত্র ১০ বছরে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত রাসেলকে খুঁজে পাই। আমি চাই, আজকের শিশুদের জীবন নিরাপদ ও সুন্দর হোক। আজকের শিশু-কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। আজকের শিশু, যারা বড় হবে উদার মন নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে। দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠনে কাজ করবে।’
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক এবং জীবনমানে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার পথে দীক্ষিত হয়ে দেশেপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পরোপকারী হিসেবে সমাজসেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান এবং প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা কোভিডসহ বিভিন্ন সময়ে তারা আন্তরিকতা দেখিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটিং ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি টাকা ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট অঞ্চলে মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৩৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাব স্কাউট সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলোতে যেন রোভার স্কাউট দল গঠন করা হয় সে বিষয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশটা আরও চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এগুলো স্থান পাবে না। সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে। চট্টগ্রামের রোভার স্কাউটদের জন্য অ্যাডভেঞ্চার ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২১৭ জেলা ও উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে দেবো। আমাদের লক্ষ্য দেশে স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু-কিশোর যুবদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট গড়ে তোলা হবে। আমার লক্ষ্যটা থাকবে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন প্রতিটা শিক্ষার্থী এই স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্কাউটের সঙ্গে জড়িতদের। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি আমাদের বাংলাদেশেই একদিন আমরা আয়োজন করতে পারবো। সেভাবে আমাদের উদ্যোগ এখন থেকে নিতে হবে। যেখানে সারা বিশ্বের লোকেরা আসবেন, কাজ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কবি-সাহিত্যিক, প্রশাসক, শিক্ষক, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, যারা দেশের সেবা করছেন, তোমাদের (স্কাউট) মাঝ থেকেই সবাই উঠে আসবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান, জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।