সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন
সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।
খন্দকার আনোয়ার আরো বলেন, সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে উপযুক্ত প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করবে।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে সর্বশেষ দ’ুটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম থেকে রাষ্ট্রপতি ২০১২ ও ২০১৭ সালে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারকে বেছে নেন।
এ ছাড়াও মন্ত্রিসভায় আজ আরো তিনটি আইনের খসড়া অনুমোদিত হয়। এ গুলো হচ্ছে- ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০২২ এর খসড়া, ‘বাংলাদেশ তেল গ্যাস, ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন আইন-২০২২ এবং ‘বৈষম্য বিরোধী আইন-২০২২’। এ ছাড়াও ‘জাতীয় লবন নীতি-২০২২ এর খসড়ারও অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮(১)-এ বিধান আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। খুব বেশি বড় আইন না এটি। এ জাতীয় আইন আমরা হ্যান্ডেল করে আসছি। এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন আছে। মোটামুটি সেই অনুযায়ী এটা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে একটা সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করা হবে।
ছয় সদস্যের এই সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।
এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাবনিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
এসব পদের নিয়োগে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স হতে হবে। এ ছাড়া সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘খসড়া আইনে অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,-‘আদালতের মাধ্যমে কেউ অপ্রকৃতিস্থ হিসেবে ঘোষিত হলে, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হলে, অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে, নৈতিক স্খলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দু-বছর কারাদ-ে দ-িত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দ-িত হলে, রাষ্ট্রীয় পদে থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আইনটি চূড়ান্ত করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। ছোট আইন।’
এছাড়াম আজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকারে বৈষম্যবিরোধী আইন, ২০২২-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেকগুলো আন্তর্জাতিক কনভেনশনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে সব রকমের বৈষম্য নিরসন করা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে এ আইন নিয়ে আসা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনের আলোকে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন- জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা বা যে পর্যায় পর্যন্ত হিউম্যান রাইটসের কোনো ভায়েলেশন হচ্ছে কিনা তা মনিটর করবে।
তিনি জানান, এখানে একজন সভাপতি থাকবেন। আইনমন্ত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এবং লেজিসলেটিং বিভাগের একজন যুগ্মসচিব সেটার সদস্য সচিব হবেন।
বৈষম্যবিরোধী একটা সেল গঠন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে সেল বৈষম্যবিরোধী কার্যাবলী প্রতিরোধ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিকার প্রদানের জন্য বৈষম্যবিরোধী জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি গঠন করবে।
‘জাতীয় লবণ নীতিমালা-২০২২’ এর খসড়ার অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখন লবণ চাষের ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেকগুলোয় ট্রাডিশনাল সিস্টেমে হচ্ছে, সেটার একটা মডিফিকেশন দরকার। মাতারবাড়ি, কক্সবাজার, পায়রায় বেশকিছু জায়গা ডেভেলপমেন্ট করার কাজ হাতে নিয়েছি। সেজন্য নতুন নতুন জায়গা গ্রহন করা এবং নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে আরও প্রোডাক্টটিভিটি ইফেকক্টিভ করা এবং বড় করার জন্য নীতিমালা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে, ২০২০-২৫ মেয়াদি এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে আমরা লবণ উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করবো এবং আমাদের লবণের ঘাটতি হবে না।’