সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোকপ্রস্তাব গৃহীত
একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২, অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনের মৃত্যুতে আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেনের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
আকবর হোসেন পাঠান ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
আকবর হোসেন পাঠান ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ‘জলছবি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে ‘আলোর মিছিল’ নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি আলোর মিছিল, সুজন সখী, সারেং বৌ- সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারে (বাচসাস) চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।
আকবর হোসেন পাঠান ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
সংসদে শোক প্রস্তাবে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯০ ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)-এর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজ সেবককে হারালো। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
প্রথা অনুযায়ি সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)-এর স্মরণে সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সরকারি দলের সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নূর, মেহের আফরোজ, হাবিব হাসান, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মুহাম্মদ কাদের, বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
শোক প্রস্তাবে স্পিকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-২ এবং অষ্টম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. কবীর হোসেন-কে হারিয়েছি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ভারতে বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোকিয়া আফজাল রহমান, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত ভাষাসৈনিক এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিণী ও শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি এমপি-র মাতা রহিমা ওয়াদুদ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যানী কাজীর মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
এছাড়া, সংসদ সচিবালয়ের অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মতিনকে হারিয়ে তার মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মিয়ানমারে হতাহত, বাংলাদেশে আহত এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। পরে মৃত্যুবরণকারীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদে বৈঠক মুলতবি করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।