শেষ পর্যন্ত বিএনপি’কে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হবে : কৃষিমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন যে নির্বাচনে কে অংশ গ্রহণ করল, আর কে করল না, তাতে কিছু যায় আসে না। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য। তিনি বলেন, সংবিধানের আলোকে সববিছু হতে হবে। বিএনপি যদি দলীয়ভাবে নির্বাচনে না আসে, তারপরও দেশে নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সময় মতো অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আজ দুপুরে জেলার মধুপুরের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ও পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা অপেক্ষা করেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি-না, এই জবাব তাদের কাছ থেকেই আপনারা পাবেন। বিএনপি বলছে নির্বাচনে আসবে না। এ রকম আন্দোলন করতে থাকবে, তারা ১৪ বছরে আন্দোলনে সফল হয় নাই। এবারও সফল হবে না।” তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাত তাদের অবস্থান সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন। তখন বোঝা যাবে, তারা কি করবে। তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে যে কোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সংলাপ করতে কোন সমস্যা নেই। সংলাপের দরজা আওয়ামী লীগ সব সময় খোলা রেখেছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ব্যর্থ হবে। তারা নতুন আর একটা কর্মসুচী দেবে, ঈদের পর একটা কর্মসূচী দেবে, ১৫ আগস্টের পরে আরও একটা দেবে। এ রকম কর্মসূচী তারা দিতেই থাকবে। আগামী সংসদ নির্বাচন আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই পাবে। তারা দেখবে পরিস্থতি কি, আমাদের আন্তরিকতাকেও তারা বিচার বিশ্লেষন করবে এবং সে অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, বিগত ২০০৮ সালে সুষ্ঠু, সুন্দর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিলো। সেই নির্বাচনকেও বিএনপি সহজভাবে নেয়নি। তারা কখনো বলে নাই যে নির্বাচনটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছিল। তিনি বলেন, গত ১৪ বছর যাবৎ একই কথা, একই রেকর্ড তারা বারবার বাজাচ্ছে যে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ অথবা তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন সুষ্ঠ, সুন্দর হবে না। পৃথিবীর কোন দেশে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। আমাদের দেখে এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল পাকিস্তান। বর্তমানে যারা এই দাবি করছে, সেই বিএনপি-জামায়াতের প্রভু হচ্ছে সেই পাকিস্তান। সেই ধারায়ই তারা সব সময় চলতে চায়, একই কথা তারা বারবার বলছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী, যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, নির্বাচনকালে সেই সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান, আইনশৃংখলা বাহিনী, আইজিপি, চীফ অব স্টাফ- সকলের দায়িত্ব হবে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ি তাদের দায়িত্ব পালন করা। মন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী অনেক সুশৃংখল এবং অনেক সক্ষম। তাদের দায়িত্ব দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা। সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য সিভিল প্রশাসন- তারাই এটা মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা। আমরা সেটা রাজনৈতিকভাবে করবো।
ড. রাজ্জাক বলেন, তবে আমি একথা জাতির কাছে বলতে চাই যে ২০১৫ সালের মতো ৯০ দিন একটানা হরতাল, অবরোধ, গাড়িতে আগুন দেয়া, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা, রেললাইন তুলে ফেলা, বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। দেশ বর্তমানে উন্নয়নের যাত্রায় রয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাকে আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা রয়েছি। এটাকে আরো গতিময় করতে চাই, আরো বেগবান করতে চাই।
মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমরা দুই-আড়াই বছর হারিয়েছি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জন্যও দেশকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। আর একটি দিনও নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। কোন হরতাল, অবরোধ করতে দেয়া হবে না, কঠোর হাতে সব মোকাবেলা করা হবে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুর রহমানের সভাপতিত্বে সুবর্ণ জয়ন্তী ও পুনর্র্র্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দিন, মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি, পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমিন প্রমুখ।
এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।