মানবপাচার বিরোধী প্রযুক্তি হস্তান্তরে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান মোমেনের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন মানবপাচার একটি আন্তঃসীমান্ত অপরাধ হওয়ায় তা রোধে রোধে বিভিন্ন দেশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পাচারকারীদের কাছে কোন কোন দেশের চেয়েও উন্নত প্রযুক্তি থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মানব পাচার কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সর্বশেষ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সহজ স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।’
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে পাবলিক সিকিউরিটি ডিভিশন এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন আয়োজিত ‘প্রযুক্তি ব্যবহার ও অপব্যবহারের প্রেক্ষাপটে মানব পাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক জাতীয় আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোমেন বলেন, বিদেশে বাংলাদেশ মিশন প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়োজিত রয়েছে যাতে তারা মানবপাচারের শিকার না হন।
তিনি বলেন, ‘প্রতারণামূলক ও জোরপূর্বক শ্রম এবং যে কোনও ধরনের পাচারের শিকার হওয়া থেকে আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করতে আমরা সজাগ রয়েছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার মন্ত্রণালয় দেশে ও বিদেশে কনস্যুলার ও কল্যাণমূলক সেবা প্রদানের জন্য দূতাবাস নামে একটি গতিশীল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে।
তিনি বলেন, জরুরি সহায়তার ক্ষেত্রে একজন নাগরিক ৩ সেকেন্ড এসওএস বোতাম টিপলে তার প্রাক-নিবন্ধিত তথ্যসহ একটি জরুরি সহায়তার অনুরোধ বাংলাদেশ মিশনে পৌঁছে যাবে।
তিনি বলেন, বিদেশে মানব পাচারের যে কোনো ঘটনা হটলাইন নম্বরের মাধ্যমেও রিপোর্ট করা যেতে পারে। কারণ, বিদেশের সকল মিশনের সপ্তাহের সাত দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা একটি ডেডিকেটেড হটলাইন নম্বর রয়েছে।
মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে এবং বিদেশে মিশন ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।
তিনি জানান যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার পাচারের শিকার প্রায় ২৫০০ জনকে প্রত্যাবাসন করেছে।
সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি সম্প্রতি শরীয়তপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত টাউন হল মিটিং এবং সিলেটে অনুরূপ কর্মসূচির উল্লেখ করে বলেন, মন্ত্রণালয় অন্যান্য জেলায়ও এ ধরনের সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানব পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং মানব পাচার প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
মানব পাচার ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ কমাতে সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী এটি আবার চালু করতে হবে।
মানব পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জাতীয় আইন প্রণয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার মানব পাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার এবং জাতীয় বাধ্যবাধকতা বিষয়ে আন্তরিক।
মোমেন অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচারের বিষয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যই প্রকৃতপক্ষে বড় আকারের অনিরাপদ ও অনিয়মিত অভিবাসনের মূল কারণ।
তিনি বলেন, ‘তাই ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং কাজের সুযোগের ব্যবধান কমাতে সাহায্য করার জন্য, আমাদের সবাইকে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোকে শুধুমাত্র পরামর্শ নয়, পর্যাপ্ত সম্পদ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে সকল অভিবাসীর প্রতি আরও মানবিক হওয়ার এবং নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন বাড়াতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।