জাতীয়জাতীয় সংবাদশীর্ষ সংবাদ

মধুমতি সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে নড়াইলের দৃশ্যপট

জেলার লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাটে ৬ লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে নড়াইলের দৃশ্যপট।গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি এ সেতুর উদ্বোধন করেন।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়,উদ্বোধনের দিন রাত ১২টার পর মধুমতি সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।এ সেতু দিয়ে নড়াইল,যশোর,স্থলবন্দর বেনাপোল,সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার শত শত যানবাহন প্রতিদিন ঢাকা,চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সহজ ও দ্রুততম সময়ে চলাচল করছে।নড়াইল ও যশোরের অনেক মানুষ এখন রাজধানী ঢাকায় সকালে গিয়ে অফিস আদালত ও ব্যবসায়িক কাজ সেরে বিকেলে কিংবা রাতে বাড়ি ফিরে আসতে পারছেন।মধুমতি সেতু এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আর্শিবাদ। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার কালনাঘাটে সেতু চালুর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় আগের চেয়ে অনেক বেশি।এ সেতু চালুর আগে কালনাঘাটে ফেরি পারের জন্য কমপক্ষে এক ঘন্টা সময় অপেক্ষা করতে হতো।মধুমতি সেতু চালুর ফলে কালনাঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষার দীর্ঘদিনের অবসান হয়েছে। এ সেতু চালুর পর দূরপাল্লার পরিবহন বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ সরাসরি চলাচলকারী অন্যান্য যানবাহন নড়াইল থেকে ঢাকায় দুই থেকে আড়াইঘন্টায় এবং যশোর থেকে ঢাকায় তিনঘন্টায় যেতে পারছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে আরো জানা গেছে, নড়াইলের কালনাঘাট ও গোপালগঞ্জের শংকরপাশার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু।এ সেতুর পূর্ব পাশে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাশে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।
সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফুজ্জামান বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়েছে।ছয় লেনের এ সেতুর চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে , যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান।
সূত্রে আরো জানা যায়,২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালনাঘাটে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ পায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।কালনা ঘাটে মধুমতি সেতু চালুর ফলে নড়াইল, স্থল বন্দর বেনাপোল, যশোর, নওয়াপাড়া,সাতক্ষীরা, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকা,চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের আওতায় ভারতের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমিয়ে আনতে কালনাঘাটের মধুমতি সেতু প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সওজ সূত্র জানায়, কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার।নড়াইল থেকে কালনাঘাটের মধুমতি সেতু ও পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব ১২৭ কিলোমিটার। যশোর থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার এবং বেনাপোল থেকে যশোর-নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯২ কিলোমিটার। ফলে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগে ঢাকার দূরত্ব কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার দেড়শ কিলোমিটার কমে গেছে। এছাড়া শিল্প শহর যশোরের নওয়াপাড়া এবং মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরা স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ হয়েছে।
নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, কালনাঘাটে মধুমতি সেতু চালুতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ায় এ জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা স্থাপনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।অনেক উদ্যোক্তা শিল্প কলকারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসছেন।এ সেতুটি শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি মাইলফলক।লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানে সেতুটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *