ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল বাজার হয়ে উঠবে বাংলাদেশ
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ উত্তাপ দেখা গেছে। এসব অভিবাসীদের অনেকে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে দেশটির অনেক রাজনীতিক অভিযোগ করে আসছেন। যদিও ঠিক কত সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে অবৈধভাবে ঢুকেছেন তা নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি দুটোই রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসীদের অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। অর্থনীতির উন্নতি হলে তারা ফিরে আসবেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
গত সোমবার চারদিনের সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানও। সফরের ফাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
ওই সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, চীন, শরণার্থী এবং দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর এই শিল্প উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীরা অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু, অর্থনীতির উন্নতি হলে তারা ফিরে আসবেন।
বাংলাদেশ ও ভারত শিগগিরই সিইপিএ বা ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এটি মূলত একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি। ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সমৃদ্ধ হয়ে থাকা সেই বাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নেবে সিইপিএ।
সালমান রহমান ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, ‘সিইপিএ করার কোনো সময়সীমা নেই, তবে আমরা আশা করি, এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে যাবে। নীতিগতভাবে, আমরা সিইপিএ করতে রাজি হয়েছি। যথাযথ আলোচনা শুরু করার আগে আমাদের বিষয়টি মূল্যায়ন বা তদন্ত করে দেখতে হবে এবং অনেক কাজ করতে হবে। ঠিক আছে, আমরা যে সময়সীমা চাই তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত ভালো, তবে অনেক কাজ করার আছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের কথাও বলেছেন। সালমান রহমান বলেন, ‘এটি কেবল শুরু। আমাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে আমি খুব আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ৫০তম বার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত সফরে এসেছি।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সালমান রহমান ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘এখানে (বিনিয়োগের) বিশাল সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, তখন শুধু বাংলাদেশের বাজারের দিকে তাকানো উচিত নয়। তাদের উচিত এটিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাথে একত্রিত করা। এর কারণ হলো, আমরা এখন যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নৌপথে কানেক্টিভিটির বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশ ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একটা বিশাল বাজার হয়ে উঠবে।’
চীন ও ‘ঋণের ফাঁদ’
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ এবং সম্ভাব্য ‘ঋণের ফাঁদ’ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সালমান রহমান বলেন, বৈদেশিক ঋণের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর এটিই বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পগুলোর মধ্যে একটি।
তার ভাষায়, ‘একইভাবে, বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক ঋণও ন্যূনতম। আমাদের সব ঋণই দ্বিপাক্ষিক ঋণ, যা রেয়াতি (স্বাভাবিকের তুলনায় ছাড়কৃত) হারে নেওয়া। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল- ওই দেশটির সরকার বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছিল। আমরা তা করিনি। এমনকি আমাদের কোনো সার্বভৌম বন্ডও নেই।’
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা বলতে গিয়ে সালমান রহমান বলেন, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর (এ বিষয়ে) উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, ‘চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক হলো- তারা আমাদের কিছু প্রকল্পের জন্য রেয়াতি ঋণ দিয়েছে এবং আমরা সেগুলোকে প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করেছি। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে বিশ্বাস করে পদ্মাসেতু হয়তো চীনা সরকারের একটি প্রকল্প। কিন্তু এটি সত্য নয়।’
‘এটি (পদ্মাসেতু) সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের অর্থায়নে এবং আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে একটি চীনা কোম্পানির মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। এটি বাণিজ্যিক বিষয়। তার মানে এই নয় যে, আমরা এই ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে কিছু অবকাঠামো প্রকল্প রয়েছে যেখানে চীন অর্থায়ন করেছে।’
অবৈধ অভিবাসী
সালমান রহমান বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু এবং একবার তাদের (অবৈধ অভিবাসীদের) অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে তারা দেশ ছেড়ে যাবে না। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে অবৈধ অভিবাসীরা বাংলাদেশে ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি মধ্যপ্রাচ্যে এখন বাংলাদেশিরা উচ্চ বেতনের চাকরি খুঁজছে। কারণ, কম বেতনের চাকরির তুলনায় তারা এখন বাংলাদেশেই ভালো বেতন পাচ্ছে। তারা দক্ষ হচ্ছে এবং তারপর বিদেশে যাচ্ছে। তাই, আমরা স্কিল ট্রেনিং, আপস্কিলিং এবং রিস্কিলিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছি।’
তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বিরোধ
সালমান রহমান বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলেই এই বিরোধের সমাধান হবে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক দফা আলোচনা করেছি এবং আমি মনে করি, ভারতের পক্ষ থেকেও (বিরোধ সমাধানের) সেই উপলব্ধি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমেই এই বিরোধের অবসান করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’