বাংলাদেশ ও জাপান কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে
বাংলাদেশ ও জাপান আজ বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে আরও জোরদার এবং একটি কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে টোকিওতে ৪র্থ ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) সময় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এফওসি চলাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনিয়র উপমন্ত্রী শিজিও ইয়ামাদা নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন।
জাপান এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ ও ২০৪১-এর মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলার অংশ হিসেবে, জাপান সংযোগের প্রেক্ষাপটে মাতারবাড়ি অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (গওউও) প্রকল্পকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশে আরও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের পরামর্শ দিয়েছে।
উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে যে, জাপানের বিগ-বি উদ্যোগে নির্মিয়মান এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চলের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, বিশেষ করে আইসিটি এবং উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প, নীল অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামুদ্রিক নিরাপত্তায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করেন।
আগামী দিনে কানেক্টিভিটি উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব মাতারবাড়ি, মেট্রোরেল এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে জাপানের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।
জাপানের সিনিয়র উপমন্ত্রী মহামারী এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্র সচিব জাপানের দেয়া কোভিড-সম্পর্কিত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা এবং আগামী কয়েক বছরের জন্য সরাসরি বাজেট সংক্রান্ত সহায়তা।
জাপানের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার আশ্বাস দিয়েছে যে, কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও মেট্রো রেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধনে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ আশা করছে যে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি আরও জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। কারণ, ঢাকা জাপানের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিবে।
পররাষ্ট্র সচিব চলতি বছরে টোকিওতে ফ্লাইট পুনরায় চালু করার বিষয়ে বিমানের পরিকল্পনা সম্পর্কেও অবহিত করেন।
জাপানের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার এই ধারণাটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যে, প্রস্তাবিত বিমান যোগাযোগ জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ এবং ব্যবসার প্রসারে সহায়তা করবে।
পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের পূর্বপুরুষের ভূমিতে দ্রুত প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেন।
জাপান জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
উভয় পক্ষই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালে ঐতিহাসিক জাপান সফরের কথা স্মরণ করেন যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব জাপানের সিনিয়র উপমন্ত্রী ইয়ামাদাকে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী এফওসিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে টোকিওতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।