জাতীয়জাতীয় সংবাদপ্রধানমন্ত্রীশীর্ষ সংবাদ

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হয়েছে যথোপযুক্ত : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা দূরে সরিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যথোপপযুক্ত হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘(বাজেট সম্পর্কে) কে কি বলছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি উপযুক্ত বাজেট ঘোষণা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন (ঢাকা জেলা ও ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগরের হাজার হাজার উৎসাহী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তাদের দলীয় প্রধানকে দেখতে সমবেত হওয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি একটি মহাসমাবেশে পরিণত হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। তাই, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
প্রায় ৭.৬২ লাখ কোটি টাকার এত বিশাল বাজেটের বাস্তবায়নে যারা শঙ্কিত, তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেট পাশের আগে কেউ কেউ বলেন, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু, আমরা প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা  ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান, এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

শেখ হাসিনা দেশবাসীকে একটি সুসংবাদ দেন যে লোডশেডিং-এ জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তারা ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জ্বালানি ক্রয়ে চুক্তি করেছেন এবং অন্য কয়েকটি দেশের সাথেও একই ধরনের চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য ভালো যে আমরা কাতার ও ওমানের সাথে চুক্তি করেছি। আমরা অন্যান্য কিছু দেশের সাথে এ নিয়ে কাজ করছি যাতে আমরা গ্যাস ক্রয় করে দেশে আনতে পারি এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতেপারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সবার দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কিন্তু, মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল ও গ্যাস ও কয়লার ঘাটতি থাকায় জনগণকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব আমাদের আমদানি করতে হয়।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি করতে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে ছিল, তারা এখন সেগুলো স্থাপন করায় কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি না ঘটলে জনগণকে কখনোই জ্বালানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানতেন যে জনগণের জন্য লোডশেডিং সহ্য করা কঠিন হবে। তাই তার সরকার সফলভাবে এর সমাপ্তি টেনেছিল। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এটি ঘটতে বাধ্য করেছে।
তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, খালেদা জিয়ার সরকার কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনকারী ১৮ কৃষককে এবং রমজান মাসে উপযুক্ত মজুরির দাবিতে আন্দোলনকারী ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করেছিল।

শেখ হাসিনা তাঁর দলের নেতাকর্মীদের কোনো দেশের কোনো নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতি গঠনে এবং দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করতে বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে, সরকার দেশ গড়বে।
বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণা করে কানাডার আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিএনপির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, কেননা তারা ভোট কারচুপিতে জড়িত এবং তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির জন্য তারেক জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেয়নি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা কোথায় তা তাঁর দল ভালো করেই জানে।
তিনি বলেন, ‘সেটা মাথায় রেখেই আমরা সব সময় কাজ করি এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছি।’
তিনি বলেন, দেশের মানুষের ওপর তাঁর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। জনগণ জানে নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অবশ্য তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে যেনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না সেজন্য সতর্ক থাকতে এবং দলকে আরও শক্তিশালী করতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সেটা মনে রাখতে হবে। আপনাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কোনো অপশক্তি ছিনিমিনি খেলতে না পারে। অশুভ শক্তির কবল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বিএনপি যখন গণতন্ত্রের নসিহত করে তখন তাঁর দুঃখ হয়।
তিনি আওয়ামী লীগকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি অর্জনই আওয়ামী লীগ এনেছে।
তিনি বাংলাদেশের জনগণকে বাংলাদেশের সব কিছু বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনগুলো দেখার জন্য ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এবং ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেছন ফিরে দেখার পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার কারণে এটি ঘটেছে। দেশে একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে এবং এর ফলে এই অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এই স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশে এ ধরনের উন্নয়ন করা সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, এটাই বাস্তবতা যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের মানুষের জন্য আর কেউ কাজ করবে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না কারণ এটি একটি গণমুখী  দল এবং এটি সর্বদা জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
তিনি বলেন, ‘ইয়াহিয়া, আইয়ুুব, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, এর শিকড় দেশের গভীরে প্রোথিত হওয়ায় কেউই তা করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছার পর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনের ফলক উন্মোচন করেন এবং ভবনটি ঘুরে দেখেন।
এ সময় দলের নেতাকর্মীদের মিছিলসহ এসে সড়কের দুই পাশে সমবেত হয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *