বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ নির্দেশিত আদর্শে দেশ চলবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে যে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন সেমতেই বাংলাদেশ চলবে। আর দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সে বিষয়েও সকলকে সতর্ক করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে (পাকিস্তানের কারাগার থেকে) এসে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কিভাবে চলবে সেই নীতিনির্ধারণী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ চলবে সেই আদর্শ তিনি ব্যক্ত করেছিলেন। আর সেই আদর্শ নিয়েই আমাদের চলতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয়।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রিয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশের উন্নয়নের চাকাটা গতিশীল থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনী- যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজদের কোন স্থান বাংলার মাটিতে হবেনা। এই কথাটটা তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন,‘জনগণের অধিকার নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবনা।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমতা থেকে হঠিয়েছে। আর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে বলেই আমরা আজ ১৩ বছর পূর্ণ করতে পেরিছি এবং পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে সেটা সম্ভব ছিলনা। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতাকে শিকার করতে হবে।
দলের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
আরো বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা.দিপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রিয় সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এবং উত্তরের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী ও শেখ বজলুর রহমান।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দী থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ফিরে আসেন। এরআগে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা ইপিআর এর ওয়্যারলেস যোগে সারাদেশে প্রচার করা হয়। এপরই পাকিস্তানী বাহিনী তাঁর বাসভবন ধানমন্ডী ৩২ আক্রমন করে জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
এরপর থেকে জাতি দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
জাতির পিতা দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি যে বলেছিলেন এদেশের মানুষ, অন্ন পাবে বস্ত্র পাবে উন্নত জীবন পাবে সেটাই আমাদের আদর্শ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সকলকে টিকা গ্রহণের আহবান জানিয়ে মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকে টিকা নেবেন টিকার কোন অভাব নেই। পাশাপাশি তিনি বিএনপি-জামায়াতের দু:শাসন, জিয়াউর রহমানের নির্বাচন নিয়ে প্রহসন এবং দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন আভাস তুলে ধরে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দাও করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আজকে দুর্নীতি খোঁজেন তাদেরকে বলবো ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে কি পরিমান দুর্নীতি হয়েছে, কেননা দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা বানিয়ে তারা বিদেশে পাচার করেছে, বাংলাদেশকে ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন করেছে, জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, যারা আজকে ঋণ খেলাপির কথা বলেন তাদেরকে বলবো জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে এলিট শ্রেণী সৃষ্টি করার জন্য যে ঋন খেলাপির কালচার এ দেশে সৃষ্টি করে গেছেন সেই খবরটা আগে নিয়ে নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ভাল কাজ করলেই তার বিরুদ্ধে লেগে থাকাটা এক শ্রেণীর মানুষের অভ্যাস। কারণ যারা এদেেেশর স্বাধীনতা চায়নি এবং খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। যারা দেশের উন্নয়নকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের কিছু প্রেতাত্মা এখনও সমাজে আছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে এবং তারাই এগুলো করে বেড়াচ্ছে। বিদেশের কাছে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনী এবং তাদের আত্মীয় স্বজন এবং এসব মামলায় বিদেশে পলাতক আসামী, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে কারাগারে থাকা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলার পলাতক ফেরারী আসামীরাই এসব দেশ বিরোধী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এসময় খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হবার পরও বাসায় থেকে দেশের সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ করে দেয়ারও উল্লেখ করেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আজকে বাংলাদেশের কোথায় কমতি আছে, যারা আজকে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আর বলেন, উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ধ্বংস হয়েছে, তাদেরকে বলি যদি ধ্বংসই হয়ে থাকে তাহলে আজকে যে দেশের মানুষ শতভাগ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, ব্যাপকভাবে রাস্তাÑঘাট হয়েছে, স্কুল-কলেজ, মেডিকেল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে- এটা কিভাবে সম্ভব হলো। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে যেখানে অনেক উন্নত দেশও পারেনি সেখানে তাঁর সরকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি বিনা পয়সায় টিকা দিচ্ছে। প্রবৃদ্ধি যেটা ৮ শতাংশের উপরে উঠেছিল করোনার মধ্যেও তা ৫ দশমিক ৪ শতাংশে রাখতে পেরেছেন, মাথাপিছু আয় ও বেড়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি আমলে ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট, সেখান থেকে তাঁর সরকার ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছে। অথনৈতিক উন্নতি না হলে যা সম্ভব ছিলনা। তিনি বলেন, যদি অর্থ ব্যয়ই না হবে তাহলে এত কাজ হয় কিভাবে। কাজেই এগুলো যারা দেখেনা তাদের চোখে ঠুলি পড়ানো। খুনীদের ঠুলি, যুদ্ধাপরাধীদের ঠুলি। তারা দেশের উন্নয়ন দেখেনা, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে প্রশংসা করলেও সেটা তাদের নজরে আসেনা। কারণ লুটে খেতে পারছেনা, সেটাই তাদের বড় কথা। তাদের লক্ষ্য দেশের হাড্ডি, কঙ্কালসার মানুষ দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে শুধু লুটপাট করে খাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম করে বেড়াচ্ছে দেশে বিদেশে। বাংলাদেশের উন্নয়নটা যারা সহ্যই করতে পারেনা, তাদের মুখেই কেবল কিছুই হলোনা এই কথা।
জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি আদায় করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এই ওৗপনিবেশিক শাসন এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে গ্রামের তৃণমূল মানুষগুলোর ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর দেয়া সংবিধান স্বীকৃত প্রজাতন্ত্রে মালিক হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণ যাতে প্রজাতন্ত্রের প্রকৃত মালিক হয় সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই জাতির পিতা দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বিকেন্দ্রিকরণ করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। যেন বাংলাদেশ কারো মুখাপেক্ষী না হয়, দেশের মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই তিনি সেই ঘুঁনে ধরা সমাজ ভেঙ্গে একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণের পদক্ষেপ নিলেন তখনই ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।
যে মানুষটার বুকভরা ভালবাসা ছিল দেশের মানুষের জন্য, আর যে মানুষগুলো তাঁদের বাড়িতেই খেয়ে পড়ে গেল (যাতায়াত ছিল) তারা কিভাবে তাঁর বুকে গুলি চালালো- তিনি ভেবে পান না। এই উর্বর মাটিতে অনেক বেইমান পরগাছার জন্ম হয়েছিল , যারা জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা উন্নয়নের পথে দেশকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকে সময় দেয়া হলোনা। যারা সে সময় নানা কলাম লিখেছেন বা আন্দোলনের নামে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন তারা কি ভেবেছিল, কি করতে চেয়েছিল সেটাই আমার প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর এখনও পাইনি।