বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতেই ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই সিদ্ধান্ত হয় ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন ও ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনে ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি করার। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করারও সিদ্ধান্ত আসে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাবন্দি হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকাকালে কয়েকজন ছাত্রনেতাকে ডেকে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকেই এই সিদ্ধান্ত আসে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
ভাষা আন্দোলনের সময়ে বঙ্গবন্ধু জেলে বসে লেখা ডায়েরিতে (পরে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আকারে প্রকাশিত) এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে ভাষা আন্দোলনের ১৫তম বার্ষিকীতে (১৯৬৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি) ভাষা দিবসের স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের সময়কালের মতো ওই সময়ও তিনি জেলে ছিলেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ের ১৯৫ থেকে ২১০ পৃষ্ঠার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভাষা আন্দোলনের কথা বর্ণনা করেছেন জাতির পিতা।
সেখানে খাজা নাজিমুদ্দীনের গভর্নর জেনারেলের পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘খাজা সাহেব প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিছুদিন পরে তিনি পূর্ব বাংলায় আসেন। প্রথমবারে তিনি কিছুই বলেন নাই। কিছুদিন পরে, বোধহয় ১৯৫১ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তিনি বক্তৃতা করলেন। সেখানে ঘোষণা করলেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’
১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নাজিমুদ্দীন যে ওয়াদা করেছিলেন, সেটা নিজেই খেলাপ করেন এমনটা উল্লেখ করে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে চুক্তি করেছিলেন এবং নিজেই পূর্ব বাংলা আইনসভায় প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে, পূর্ব বাংলার অফিশিয়াল ভাষা বাংলা হবে। এ প্রস্তাব পূর্ব বাংলার আইনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। যে ঢাকায় বসে তিনি ওয়াদা করেছিলেন সেই ঢাকায় বসেই উল্টা বললেন। দেশের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হল। তখন একমাত্র রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ছাত্র প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ এবং যুবাদের প্রতিষ্ঠান যুবলীগ সকলেই এর তীব্র প্রতিবাদ করে।’
কারাবন্দী হিসেবে ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগে (জানুয়ারির শেষ দিকে) বঙ্গবন্ধু ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার বিষয়ে এর বর্ণনায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আমি হাসপাতালে আছি। সন্ধ্যায় মোহাম্মদ তোয়হা ও অলি আহাদ দেখা করতে আসে। আমি ওদের রাত ১টার পরে আসতে বললাম। আরও বললাম, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহাবুব আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে খবর দিতে। পেছনের বারান্দায় ওরা পাঁচ-সাতজন এসেছে। বারান্দায় বসে আলাপ হলো এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও খবর দিয়েছি। আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে। আরও বললাম, তোমরা আগামীকাল রাতেও আবার এসো। আরও দু’একজন ছাত্রলীগ নেতাকে আসতে বললাম। শওকত মিয়া ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীকেও দেখা করতে বললাম। পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসলো। সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি করা শুরু হবে।’
বঙ্গবন্ধু তাঁর মুক্তির দাবি করে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করবেন বলেও ওই রাতে উপস্থিত নেতাদের অবহিত করেন। তার সঙ্গে বন্দি মহিউদ্দিনও অনশন করার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।
এরপর ‘মেডিক্যাল বোর্ড’ এর পরামর্শে বঙ্গবন্ধুকে হাসপাতাল থেকে প্রথমে ঢাকা জেলে পরে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানেই বসেই ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট করেন বলে আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন।
ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘এদিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও গঠন করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনও ধার্য করা হয়েছে। কারণ, ওইদিনই পূর্ব বাংলার আইনসভা বসবে। কাজী গোলাম মাহাবুবকে সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ছাত্ররাই এককভাবে বাংলা ভাষার দাবির জন্য সংগ্রাম করেছিল। এবার আমার বিশ্বাস ছিল, জনগণ এগিয়ে আসবে। কারণ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করতে পারলে তাদের দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। মাতৃভাষার অপমান কোনও জাতি সহ্য করতে পারে না।’
ফরিদপুর জেলে বসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিনকার ঘটনা বঙ্গবন্ধু বর্ণনা করেছেন এভাবে—
‘‘২১ ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম। রাতে সিপাহীরা ডিউটিতে এসে খবর দিলো, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’, আরও অনেক স্লোগান। রাতে যখন ঢাকার খবর পেলাম তখন ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি। গুলি করার তো কোনও দরকার ছিল না। হরতাল করবে, সভা ও শোভাযাত্রা করবে, কেউ তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় না। কোনও গোলমাল সৃষ্টি করার কথা তো কেউ চিন্তা করে নাই। অনেক রাতে একজন সিপাহী এসে বললো, ছাত্র মারা গেছে অনেক। বহু লোক গ্রেফতার হয়েছে। রাতে আর কোনও খবর নাই। ঘুম তো এমনিই হয় না, তারপর আবার এই খবর।’’
‘২২ তারিখে সারাদিন ফরিদপুরে শোভাযাত্রা চললো। খবরের কাগজ এলো, কিছু কিছু খবর পেলাম। মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করলো। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। গুলি হলো মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভেতরে, রাস্তায়ও নয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলতো। আমি ভাবলাম, দেখবো কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে। বাংলাদেশের মুসলিম লীগ নেতারা বুঝলেন না, কে বা কারা খাজা সাহেবকে উর্দুর কথা বলালেন, আর কেনই বা তিনি বললেন! তাঁরা তো জানতেন, উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলে মিস্টার জিন্নাহর মতো নেতাও বাধা না পেয়ে ফিরে যেতে পারেন নাই। সেখানে খাজা সাহেব এবং তার দলবলের অবস্থা কী হবে?’
‘খবরের কাগজে দেখলাম, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও খোন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। দু’একদিন পরে দেখলাম কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নারায়ণগঞ্জে খানসাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে ভীষণ মারপিট করেছে। বৃদ্ধ খান সাহেব ও তাঁর ছেলেমেয়েদের উপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের কোনও কর্মীই বোধহয় আর বাইরে নাই।’
‘১৯৫২ সালে ঢাকায় গুলি হওয়ার পরে গ্রামে গ্রামে জনসাধারণ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, ২১ ফেব্রুয়ারি গুলি হওয়ার খবর বাতাসের সাথে সাথে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে এবং ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছে। মানুষ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, বিশেষ একটা গোষ্ঠী (দল) বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়।’
‘ভরসা হল, আর দমাতে পারবে না। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে উপায় নাই। এই আন্দোলনে দেশের লোক সাড়া দিয়েছে ও এগিয়ে এসেছে। কোনো কোনো মওলানা সাহেবরা ফতোয়া দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। তাঁরাও ভয় পেয়ে গেছেন। এখন আর প্রকাশ্যে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। জনমত সৃষ্টি হয়েছে, জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকরাও ভয় পায়। শাসকরা যখন শোষক হয় অথবা শোষকদের সাহায্য করতে আরম্ভ করে তখন দেশের ও জনগণের মঙ্গল হওয়ার চেয়ে অমঙ্গলই বেশি হয়।’
‘ওই দফায় জেল থেকে বেরুনোর পর কিছুদিন গ্রামে থাকার পর ঢাকায় আসেন। সেই সময়কার ঘটনার বর্ণনা করে আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন- আমি সাধারণ সম্পাদক হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যাঁরা ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম। সরকার যে বলেছেন, বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের উসকানিতে এই আন্দোলন হয়েছে, তার প্রমাণ চাইলাম।’
কারাগারের রোজনামচা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের রোজনামচা বইয়ে ১৯৬৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। ওই দিনের ঘটনায় তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। এখানেও তিনি প্রায় একই ধরনের কথা লিখেছেন।
‘২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭। ৮ই ফাল্গুন’ তারিখ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ডায়েরিতে যা লিখেছেন তা হলো-
‘আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ঠিক পনের বছর আগে সেদিন ছিল বাংলা ১৩৫৮ সালের ৮ই ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার, ইংরেজি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য শহীদ হয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন বীর সন্তান: ১। আবদুস সালাম, ২। আবদুল জব্বার, ৩। আবুল বরকত, ৪। রফিকউদ্দিন। আহত হয়েছিলেন অনেকেই। ঠিক পনের বৎসর পূর্বে এইদিনে আমিও জেলে রাজবন্দি ছিলাম ফরিদপুর জেলে। ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট করি। জানুয়ারি মাসে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানেই ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে ১৬ই ফেব্রুয়ারি অনশন করব আর ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা দিবস পালন করা হবে বলে স্থির হয়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি আমাকে ও মহিউদ্দিনকে ফরিদপুর জেলে চালান দেওয়া হলো। মহিউদ্দিনও আমার সাথে অনশন করবে স্থির করে দরখাস্ত দিয়েছিল।’
বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘প্রথম ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে।পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (এখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ) ও তমদুন মজলিসের নেতৃত্বে। ঐদিন ১০টায় আমি, জনাব শামসুল হক সাহেবসহ প্রায় ৭৫ জন ছাত্র গ্রেফতার হই এবং আব্দুল ওয়াদুদ-সহ অনেকেই ভীষণভাবে আহত হয়ে গ্রেফতার হয়।’
কারাগারের রোজনামচা বইয়েও বন্দি অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদের দিন স্থির করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
এখানে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘তখন জনাব নূরুল আমীন মুখ্যমন্ত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলি হলো। আমার ভাইরা জীবন দিয়ে বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করলো। এইদিন আমাদের কাছে পবিত্র দিন। ১৯৫৫ সালে নূতন কেন্দ্রীয় আইন সভায় আওয়ামী লীগ ১২ জন সদস্য নিয়ে ঢুকলো এবং তাদের সংগ্রামের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বাধ্য হলো ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলা ও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে। আওয়ামী লীগ যখন ১৯৫৬ সালে ক্ষমতায় বসলো তখন ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করলো। ১৯৫৭-৫৮ সালে এই দিবসটা সরকারিভাবেও পালন করা হয়েছে।শহীদ মিনার করার জন্য পরিকল্পনা করে বাজেটে টাকা ধরে কাজ শুরু হয়েছিল কিন্তু ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি হওয়ার পরে এই দিনটি সরকারি ছুটির তালিকা থেকে বাদ পড়লো, আর মিনারটা চুনকাম করেই শেষ করে দেওয়া হলো।’