প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাইডেনের সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক তুলে ধরেছে: মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সুসম্পর্ককে চিহ্নিত করেছে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রাতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৈনন্দিন ব্যস্ততার বিষয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন,‘তার (বাইডেন) বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার সব ইচ্ছা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারতীয় সমকক্ষ নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ৮ সেপ্টেম্বর এখানে পৌঁছেছেন।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মোমেন বলেন, বাইডেন এর আগে মন্তব্য করেছিলেন যে ‘গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে এবং আগামী ৫০ বছরে এটি আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় হবে’।তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এর নমুনা দেখেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন: ‘এটি (অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নৈশভোজ সহ দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে বাইডেন, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং সায়মা ওয়াজেদের মধ্যে আলোচনা) প্রমাণ যে ওয়াশিংটনের সাথে আমাদের গভীর ও দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে এটি আরও শক্তিশালী করব।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুসংহত করতে খুবই আগ্রহী এবং এজন্য তারা তাদের লোক পাঠাচ্ছে এবং আলোচনা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘তারা (আমেরিকান সরকার) আমাদের উপর কোন চাপ দিচ্ছে না বরং মিডিয়া অতিরঞ্জিত করছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের রাজধানীর প্রগতি ময়দানে ভারত মান্দাপাম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে জো বাইডেন, শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ ১৫ মিনিট কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে কথা বলছিলেন, তখন তিনি খুব খুশি এবং সম্পূর্ণ উৎ্সাহী ছিলেন এবং আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং উষ্ণ পরিবেশে হয়েছিল।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার মেয়ে যখন বাইডেনের সাথে কথা বলছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন সেই মুহূর্তের ছবি তোলার জন্য তার সেল ফোনটি বের করেন।
মোমেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সেল ফোনে একটি সেলফিও তুলেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাইডেনের সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক তুলে ধরেছে: মোমেন
মোমেন বলেন, বাইডেনের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
মোমেন জানান যে, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আমার পরিবার। কারণ আমি আমার বাবা, মা ও ভাইদের হারিয়েছি- যাদেরকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে সম্ভব সবকিছু আমি করছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশে যাতে কেউ গৃহহীন না থাকে সেলক্ষ্যে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনি প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন লোককে বিনামূল্যে একটি বাড়ি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
বাইডেন বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর গৃহীত প্রচেষ্টা সম্পর্কে তিনি জানেন। এ সময় তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
মোমেন জানান, আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ এবং আমেরিকার প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে আলোচনার কথাও তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদ বাইডেনকে বলেছেন, তিনি অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এবং ফ্লোরিডায় কাজ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সায়মা ওয়াজেদের কাজের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তার কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
মোমেন বলেন, ‘সায়মা বাইডেনকে তার বিজনেস কার্ড দিয়েছেন।’
বাইডেন সায়মা ওয়াজেদকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গেও সৌহার্দ্যপূর্ণ কথা বলেছেন।
মোমেন আরো জানান, শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে বাইডেনের বক্তৃতার প্রশংসা করেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাপান ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী, জার্মান চ্যান্সেলর ও মিসরের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
মোমেন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের শেখ হাসিনাকে নিয়ে গর্ব করা উচিৎ।’
শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে বাইডেনের এক্সক্লুসিভ ছবি নিয়ে কিছু লোকের বিরূপ মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তুললে- তা খুবই দুঃখজনক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর আগেও এক শ্রেণীর লোক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সম্মান জানানোর বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
শেখ হাসিনা ও মোদির সাথে কোন রাজনৈতিক আলাপ হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘আমরা যখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম, তখন কোন রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। তবে দুই প্রধানমন্ত্রী পরস্পরকে জানান যে- ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশে আগামী বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।