প্রধানমন্ত্রী

পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যেন থাকে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে ওঠা উচিত। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যেন থাকে, সেটাই বড় কথা। এই বিশ্বাস এক সময় ছিলই না। আওয়ামী লীগ সরকারের জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগের ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই আপনারা সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছেন বলেই মানুষের এই বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন।

অগ্নি-সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সতর্ক থাকুন যাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে না পারে। কেউ আবার অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাস করার সাহস না পায়। কেউ আর যাতে কখনও কারও জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। ঠিক আছে জনগণকে নিয়ে করবে। সেক্ষেত্রে যদি কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে। কারণ আজ বাংলাদেশের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সেটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। এজন্য আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে, পরিকল্পনা করতে হয়েছে। যার ফলে মাত্র ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি।

তিনি পুলিশের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে সৃষ্ট সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ- যেমন অগ্নিসন্ত্রাস বা নানা নৈরাজ্য যেখানে পুলিশ সদস্যদের নির্দয়ভাবে মারা হয়েছে, আমরা দেখেছি। কাজেই ভবিষ্যতে যাতে আমাদের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা কেউ ব্যহত করতে না পারে, কেউ যেন আর ওই অগ্নিসন্ত্রাস করার সাহস না পায়। মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা যেন কেউ বিঘ্নিত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকেই পালন করতে হবে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং সেক্টর ওয়াইজ বাহিনী করে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। থানা, তদন্ত কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও তার সরকার করে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল হাসান। কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার কথাও শোনেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু নিজেরাই মুখে বলি না, সারাবিশ্বও স্বীকার করে এই করোনা মোকাবিলা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময় অর্থনৈতিক নীতিমালাকে শক্তভাবে ধরে রাখা এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখার মতো একটা দুঃসাহ্য কাজ আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। আর এই করতে পারার পেছনে আপনাদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পুলিশ বাহিনীরও অবদান রয়েছে। এজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবো এই অগ্রযাত্রাকে কেউ যেন ব্যহত করতে না পারে। এটুকুই আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে। যে কোনও দল ও মতের অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে এবং দেশের কল্যাণে কেউ যেন কোনও ধ্বংসাত্মক কিছু করতে না পারে, কোনও কাজে যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, কোনও ক্ষেত্রেই যেন এই অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন এবং যতটুকু করা যায় তিনি এবং তাঁর সরকার তা করবেন। কারণ অনেক কিছুই তাদের দাবি করতে হয়নি। তিনি নিজে খোঁজ নিয়ে জেনে সে সব সমস্যার সামাধান ইতোমধ্যে করে দিয়েছেন।

জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেটা পূরণ করাটাই তার একমাত্র লক্ষ্য বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারি একটি জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে মথা উঁচু করে চলবে, কারও কাছে হাত পেতে নয়। ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর স্মার্ট বাংলাদেশ।

যে কোনও সমস্যার সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কোনও সমস্যার সমাধান কেউ এককভাবে করতে পারে না। একটা যুদ্ধ সেনাবাহিনী একা করবে বা সশস্ত্র বাহিনী করলেই জিতে যাবে তা কিন্তু নয়। এই যুদ্ধে কিন্তু মানুষের সমর্থন লাগে। এজন্যই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৯৬ হাজার সৈনিকসহ লোকবল থাকার পরও জনসমর্থন না থাকার কারণেই তারা আমাদের কাছে পরাজিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সেই বিজয়ের উদাহারণ টেনে চলমান বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে দেশে মন্দাবস্থা বিরাজ করার প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বলেন, এই অর্থনৈতিক মন্দা যদি আমরা মোকাবিলা করতে চাই তাহলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কিছু সমস্যা আমাদের সবারই হবে, সেখানে কৃচ্ছতা সাধন তো আমাদের করতেই হবে। আর এটা সাময়িক ব্যাপার। আমি আশা করি এ অবস্থা থাকবে না।

তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।শেখ হাসিনা বলেন, নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজে করতে হবে যেন আমাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি। সেই মানসিকতা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সূত্র: বাসস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *