পাহাড়ী ঐতিহ্যবাহী পিননে স্বপ্ন বুনছেন সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা
জেলার কাপ্তাই ইউনিয়নের দূর্গম হরিণছড়া এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের দুছড়ি পাড়ায় বসবাস নারী উদ্যোক্তা সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যার। সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় পাহাড়ী ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন-হাদি তৈরী করে ব্যবসা শুরু করা এই নারী উদ্যোক্তা পাহাড়ের দূর্গমতাকে জয় করে ধীরে-ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। দূর্গম এলাকা হওয়াতে বছরের সবসময় ব্যবসা চাঙ্গা না থাকলেও উৎসব পার্বনে সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা খুব ব্যস্ত সময়ই পার করেন পিনন-হাদি তৈরীর কাজে।
সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) জানান- তাদের পরিবারের জীবন-সংগ্রামের কাহিনী। সান্তনার বাবা শেল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা পেশায় একজন কৃষক এবং অন্যের জুমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করতেন।
কাজ না থাকলে ঘরে বসে থাকতে হয় তাকে। মা লক্ষ্মী দেবী তঞ্চঙ্গ্যা গৃহিণী। সান্তনারা তিন বোন। সেই সবার বড়। মেঝ বোন দয়াবালা তঞ্চঙ্গ্যা কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত। আর ছোট বোন আদরবালা তঞ্চঙ্গ্যা প্রাথমিকের গন্ডি পার হয়ে আর পড়ছেন না।
সান্তনা জানান, সে চন্দ্রঘোনা পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে পারিবারিক সমস্যার কারনে এইচএসসি পর্যন্তই থেমে যায় তার শিক্ষা জীবন। সে সময় পারিবারিক চাহিদার মিটানোসহ নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা। আর তখন তিন বোনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে শুরু করেন পিনন-হাদির ব্যবসা।
সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, তারা তিন বোনে মিলে এই কাজ করেন। একটি পিনন তৈরীতে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ লাগে। স্থানীয়ভাবে একটি পিনন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আবার বাহিরে নিয়ে গেলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। তারা মাসে কমপক্ষে ৬-৮ টি পিনন তৈরী করতে পারে। বর্তমানে এই পিনন-হাদির ব্যবসা করে তারা পারিবারিক চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি নিজের খরচও চালায়। তবে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা তার পিনন-হাদির ব্যবসার পরিসর আরেকটু বাড়াতে পারতেন বলে জানান।
সান্তনা আরো জানান, অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ এই পিনন তৈরী করা। আবার পুঁজিও দরকার। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরোও বেশী এগিয়ে যেতে পারবে বলে জানান সান্তনা।
১১৯ নং ভাইজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা বাসসকে জানান, পারিবারিক চাহিদা মিটানোসহ নিজের পায়ে দাঁড়াতে তার মৌজার অন্তর্গত দুছড়ি পাড়ার সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা তার দুই বোন মিলে পিনন-হাদি বুননের কাজসহ তারা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এভাবে চেষ্টা করলে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তাদের এই উদ্যোগকে সফল করতে তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) জানান, সরকারি কাজ পরিদর্শনের সময় আমি দুছড়ি পাড়ায় সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যার বসত বাড়ির আঙ্গিনায় তার পিনন বুননের কাজ দেখেছি। তিনি জানান, সরকার যেহেতু উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়, সহযোগিতা দেয়, ঠিক তেমনি কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন হতে প্রান্তিক পর্যায়ে গড়ে উঠা এই সমস্ত নারী উদ্যোক্তাদের আমরা সবসময় সহযোগিতা করতে প্রস্তত।
সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় গড়ে উঠা এসব নারী উদ্যোক্তা সরকারি-বেসরকারী সহায়তা পেলে পার্বত্য এলাকায় বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আরো সফল নারী উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।