পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিপুল অস্ত্র-গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার ১০
বান্দরবান-রাঙামাটির পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ, ওয়াকিটকি, বাইনোকুলার ও সামরিক পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাতজন এবং পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিনজনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-৭ ও ১৫-এর যৌথ অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম উইংয়ের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ায় র্যাবের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র্যাব-১৫ ও র্যাব-৭-এর সদস্যরা অভিযান চালান। এ সময় সমতলের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭ সদস্য এবং কেএনএফের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাতজন হলেন সৈয়দ মারুফ ওরফে মানিক (৩১), ইমরান হোসাইন ওরফে শাওন (৩১), কাওসার ওরফে শিশির (৪৬), জাহাঙ্গীর আহম্মেদ ওরফে জুনু (২৭), মো. ইব্রাহিম ওরফে আলী (১৯), আবু বক্বর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পি (২৩) ও রুফু মিয়া (২৬) এবং কেএনএফের তিনজন হলেন জৌথান সাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) ও মাল সম বম (২০)। কেএনএফের তিনজনই বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে—এসবিবিএল বন্দুক ৯টি ও গুলি ৫০ রাউন্ড, এসবিবিএল বন্দুকের কেস ৬২টি, হাতবোমা (ইআইডি) ৬টি, কার্তুজ কেস একটি, কার্তুজ বেল্ট দুটি, দেশীয় পিস্তল একটি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি একটি ও চার্জার তিনটি, কুকি চিন স্টেট লেখা ১০টি মানচিত্র এবং সামরিকসহ ব্যবহারের বিভিন্ন পোশাক ও সরঞ্জাম।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের পর্যালোচনা করে র্যাব নিশ্চিত হয় যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিপুলসংখ্যক সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।’
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে অর্থের বিনিময়ে দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিত।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অভিযানে বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ায় একটি আস্তানা ধ্বংস করা হয়। পার্বত্য এলাকায় আরও কয়েকটি জঙ্গি-সন্ত্রাসী আস্তানা থাকতে পারে। এ ছাড়া জঙ্গি সংগঠনটির আরও অন্তত ৫০ সদস্য বিভিন্ন আস্তানায় অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে র্যাব মনে করছে।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তাঁরা শারীরিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সিনিয়র সদস্যদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সেফ হাউসে থাকেন। পরে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলে আসেন প্রশিক্ষণের জন্য।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, অভিযানে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ হতাহত হননি। সন্ত্রাসীদের কারও হতাহত হওয়ার কোনো তথ্যও র্যাবের জানা নেই। জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান আনিসুর রহমান মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। কদিন আগেও মাহমুদ পার্বত্যাঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শনে আসেন। তবে অভিযান শুরুর আগেই সেই এলাকা ত্যাগ করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানে হয়।