নড়াইলবাসীকে কথা দিয়েছিলাম, কথা রেখেছি : প্রধানমন্ত্রী
নড়াইলে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান হলো। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর এবার উদ্বোধন হলো ‘দক্ষিণের দুয়ার’ খ্যাত মধুমতি সেতু। সোমবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় প্রান্ত থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মধুমতি সেতুর উদ্বোধন করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নড়াইলবাসীকে কথা দিয়েছিলাম। কথা রেখেছি। এই মধুমতি সেতু শুধু নড়াইলের আর্থ সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের ভাগ্যোন্নয়নের সেতু। পদ্মা সেতু হলেও এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ের একমাত্র মিসিং লেন ছিল এই মধুমতি নদী। মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু নির্মাণের ফলে এক্সপ্রেসওয়ের কোনো মিসিং লেন আর রইলো না। আমি নড়াইলবাসীকে বলতে চাই, আমি নড়াইলের এমপি ছিলাম। নিজেকে এখনও নড়াইলের এমপি মনে করি।
একই অনুষ্ঠানে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি আজ দূর হলো। প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী কথা দিয়েছিলেন, আমাদের স্বপ্ন আজ পূরণ করেছেন। এই মধুমতি সেতুর মাধ্যমে শুধু নড়াইলই নয় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।
এই সেতুটি শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ান হাইওয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে শুরু হয়ে জাপানে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতুর মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে। কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী লোহাগড়া উপজেলার কালনা এবং অপরপ্রান্ত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা অবস্থিত। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতু। কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু করেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে সেতুটি নির্মাণ করছে জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ওয়াইবিসি জেভি কোম্পানি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড।
মধুমতি সেতু সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। যেটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে চওড়া সেতু। এই সেতুতে মোট ১৩টি স্প্যান রয়েছে। সেতুর মাঝখানে ধনুকের মত বাঁকা ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান সুদৃশ্য ডিজাইন করে বসানো হয়েছে। নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে।
উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের বাঁকগুলো যানবাহন চলাচলের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে দুর্ঘটনা রোধে আট লেনের সমান প্রস্থ রাখা হয়েছে। দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য চার লেন ও ধীর গতির যানবাহনের জন্য দুই লেন মোট ছয় লেন বিশিষ্ট সেতুর নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা ৮৫ লাখ টাকা।
সেতুর নড়াইল অংশে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করায়, রাত ১২টার পর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, সেতুটি উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সেতুর টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটো টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল ৫ টাকা।