ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দলিল দস্তাবেজ মূল্যায়নে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, আইনজীবীদের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে চলমান বিচার বন্ধে বিবৃতিদাতা বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের তার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত নথিগুলো মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই করতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিবৃতি না দিয়ে তারা এক্সপার্ট পাঠাক। যদি এতই দরদ থাকে তারা ল-ইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক। মামলার সমস্ত দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন। তারাই দেখে বিচার করে যাক এখানে কোন অপরাধ আছে কী না। তবে, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কতিপয় বিশিষ্ট নাগরিকদের খোলা চিঠির মাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে ড. ইউনুসের বিচার স্থগিত করার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার খুব অবাক লাগছে। ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ^াস থাকতো যে তিনি কোন অপরাধ করেননি, তাহলে ঐ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া সবকিছু একটা আইনমত চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মস্যাৎ করে এবং সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের পক্ষে যদি লেবার কোর্টে মামলা হয় তাহলে আমাদের কি সেই হাত আছে আমরা মামলা বন্ধ করে দেব। আর চলমান মামলা নিয়ে আমরাতো আমাদের দেশে আলোচনাও করি না, কারণ এটা সাবজুডিস (আদালত অবমাননা)। সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে দাবি করা হচ্ছে মামলা প্রত্যাহার করার? এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে আপনারাই বলেন, সে পাওয়ারটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিশিয়ারিতো সম্পূর্ণ স্বাধীন।
তিনি বলেন, যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন তাদেরকে আমি আহ্বান করি-এক্সপার্ট পাঠান, লইয়ার পাঠান, এতই যদি দরদ থাকেতো এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তার সমস্ত দলিল, দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন- সেখানে কোন অন্যায় আছে কি না, বা কি কি অসামঞ্জস্যতা আছে?
লেবার ল নিয়েতো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ করে আইএলওতে অনেক কথা শুনতে হয়, বিভিন্ন নালিশের প্রেক্ষিতে- সেকথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের কোম্পানী আইনে আছে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে এখন সেটা যদি কেউ না দেয় এবং এজন্য তারা যদি মামলা করে এবং মামলা করার ফলে তাদের যদি চাকরীচ্যুত করা হয় এবং তারজন্য তারা যদি আবার মামলা করে তাহলে সেই দায় দায়িত্বতো আমাদের নয়। আবার এই মামলা যাতে না হয় সেজন্য ঘুষ দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন মামলা দায়ের করার ব্যাপারে তাঁদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বরং মামলা রুজু করেছে শ্রমিকেরা এবং এনবিআর। ট্যাক্সেও বিষয়টা সম্পূর্ন এনবিআর এর এখতিয়ার। আর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হলে অর্থতো তাদের আদায় করতে হবে। কেননা ট্যাক্স দেয়াতো সকল নাগরিকের দায়িত্ব। আর যারা বিবৃতি দিয়েছেন এমন ইউরোপ, আমেরিকা বা যুক্তরাজ্যে ট্যাক্স ফাঁকিদাতাদের সঙ্গে কি করা হয়-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিশে^র বিভিন্ন দেশে নোবেল বিজয়ীরা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ধরা পড়ায় মামলার শিকার এমন উদাহারণও টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমন বহু নোবেল লরিয়েট রয়েছেন যারা কারাগারে বন্দি আছেন পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজের জন্য।”
সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান- গ্রামীন ব্যাংকের এমিডি, তুলতেন সরকারি হারে বেতন,’ উল্লেখ করে সাবেক এমডি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে সরকার প্রধান বলেন, “সরকারি বেতনভুক একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কিভাবে ইনভেস্টমেন্ট করে আর বাণিজ্য করে?”
এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরাও কোন খোঁজ খবর করে সংবাদ পরিবেশন করেননি যা একজন রাজনীতিবিদের বেলায় করা হোত হলেও তিনি উস্মা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন, আর দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে পছন্দের হলে তার কোন দোষ নাই।
৪৬০ কোটি ক্ষতিপূরণ পেলেও ১২শ’ কোটির ওপর যে পাওনা সেটার বিষয়ে দেশি-বিদেশি প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টায় আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী, কেন পারবে না?
আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে, কে বিবৃতি দিলো না দিলো সেটা আদালতের দেখার দরকারটা কি এবং আদালত এতে প্রভাবিত হবে কেন? আদালত ন্যায় বিচার করবে। আওয়ামী লীগ সবসময় শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে, যোগ করেন তিনি।