জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিশ্বশান্তি ও মানবমুক্তির দিকদর্শন: আ.লীগ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ ‘বিশ্বশান্তি ও মানবমুক্তির দিকদর্শন’ বলে উল্লেখ করেছে দলটি।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের সামনে দুর্যোগের সঙ্কটপূর্ণ সময়ে সমাধানের সূত্র তুলে ধরেছেন। যুদ্ধ, অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রভাব এবং স্বার্থগত সংঘাতকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবমুক্তির প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা পরিহার করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার এই আহ্বান বিশ্বশান্তি ও মানবমুক্তির দিকদর্শন।’ প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণে বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মর্মবাণী প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বরাবরের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেছেন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের উপর জোর তাগিদ দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণে শুধু বর্তমান সঙ্কট সমাধানের বার্তাই নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার দিক-নির্দেশনাও ছিল। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার এই ভাষণে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ।
বিবৃতিতে কাদের বলেন, ‘বিপর্যস্ত মানবিকতা রক্ষায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বমানবতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এই সঙ্কট সমাধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাতৃভূমি রাষ্ট্র মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিবাদমান এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। তারপরও এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধান না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উগ্রবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটতে পারে যা উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে মর্মে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতৃবন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উত্তরণে টিকা প্রদান করায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও এর কোভ্যাক্স ব্যবস্থা এবং সহযোগী দেশসমূহকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গৃহীত সময়োপযোগী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর ভাঙার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি কল্যাণকর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাঙালি জাতির স্বাপ্নিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণেও তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। বিশ্বনেতাদের সামনে সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত বার্তা ও দিক-নির্দের্শনা তুলে ধরায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিবাদন।’