প্রধানমন্ত্রী

জনগণ কিভাবে বর্বরতার ধারক বিএনপিকে সমর্থন করতে পারে ? : প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বিএনপি-জামায়াত জোটের নৃশংসতার অডিও-ভিজ্যুয়াল ও ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছেন, ন্যূনতম মানবতা আছে এমন মানুষ কিভাবে বিএনপিকে সমর্থন করতে পারে।
তিনি বলেন,‘আপনারা (আইন প্রণেতারা) বিএনপির শাসনামলের ছবি দেখেছেন। তাহলে বলুন, যাদের ন্যূনতম মানবিকতা আছে তারা কীভাবে বিএনপিকে সমর্থন করেন? তাদের সাথে হাত মেলাবেন কিভাবে? এটা আমার প্রশ্ন?’
সংসদের এই অধিবেশনে তাঁর সমাপনী ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্ন তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট কর্তৃক সংঘটিত বর্বরতা ও নির্যাতনের এই কয়েকটি ঘটনা আমি তাদের (আইন প্রণেতাদের) দেখাতে পেরেছি।
তিনি বলেন,‘এই ভিডিও এবং ছবির মত, শত শত ঘটনা আছে। এটা বিএনপি এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনের বাস্তব চিত্র যে তারা কিভাবে ১৯৭৫ সাল থেকে মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে।’ ।
হাউজে তিনি জেনারেল জিয়ার সশ¯্র বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, গুম, খুন এবং জেনারেল এরশাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নির্যাতনের ভিডিও এবং স্থির চিত্রও তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হতাশাব্যঞ্জক কথা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের কেউ কেউ দলের কোন উন্নয়ন দেখতে পায়না। অথচ করোনাভাইরাস মোকাবেলা করেও ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি আর বিএনপি আমলে এই বাজেট ছিল ৬২ থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যদি উন্নয়নই না হবে তাহলে বাজেট ১১ গুণ বাড়ল কিভাবে, আমাদের উন্নয়ন বাজেটও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বিএনপি শাসনামলে ছিল ৫শ’ ৪৩ মার্কিন ডলার আর আমাদের সময়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। করোনা মোকাবেলা করেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি আমরা ৬ দশমিক ৬ এ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি এবং এরআগে আমরা প্রবৃদ্ধি ৮ এর ওপরে তুলেছিলাম। দারিদ্রের হার বিএনপি আমলে যেখানে ৪১ ভাগ ছিল সেটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার পাশাপাশি শিক্ষার হার বিএনপি’র রেখে যাওয়া ৪৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে তাঁর সরকার বর্তমানে ৭৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে এবং কারিগরি শিক্ষাকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে এবং স্কুল পর্যায় থেকেই এখন এই শিক্ষা শুরু করা হচ্ছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি বৃদ্ধি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপ এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়ার পরও আজকে বিএনপি উন্নয়ন দেখেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার পরে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের কারণে বিশে^র বড় বড় দেশগুলো যেখানে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে তাদের আগাম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে সাশ্রয় এবং কৃচ্ছতা সাধনের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। তারপরেও তাঁর সরকার অর্থনীতিটা যে ধরে রাখতে পেরেছে সেটাই তাঁর সরকারের সাফল্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে আয়েশী জীবনের কথা তুলে ধরে তাদের কাছে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন কত টাকা পাচার হচ্ছে তা তদন্ত করে দেখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর ৪০ দিন পর্যন্ত টেলিভিশনে প্রচার চালানো হয়েছিল যে তিনি অত্যন্ত সৎ ছিলেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়া নাকি কোনমতে রেশনের টাকা জোগাড় করে চলতো এবং জিয়াউর রহমানের ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিচ্ছু ছিল না।’
জিয়া পরিবারের সদস্যদের এখনকার বিলাসী জীবন ও আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন,“সেই খালেদা জিয়ার গায়ে উঠলো ফ্রেঞ্চ সিফন যা বিদেশে ছাড়া পাওয়া যায় না। দাম এক লক্ষ টাকা। তাহলে সেই ভাঙা বাক্সটাই জাদুর বাক্স হয়ে গেল। সেখান থেকে কোকো ১, কোকো ২ করে কোকো ৬ বের হলো। সেখান থেকে ইন্ডাষ্ট্রি বের হলো। সেখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা যে টাকা পাচারের অভিযোগ তুলে আসছে তার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলে, টাকা চুরির কথা বলে টাকা যেটা মানি লন্ডারিং হয়েছে খালেদা জিয়ার ছেলের টাকাইতো আমরা বিদেশ থেকে আনতে সক্ষম হয়েছি।”
তাহলে টাকাটা পাচার করেছে কারা প্রশ্ন তুলে সরকার প্রধান বলেন, সেটাও তো প্রমাণিত সত্য।
বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে লন্ডনে থাকে কিভাবে? কি নিয়ে চলে? নিজেই বলে যে ক্যাসিনো থেকে নাকি টাকা দিয়ে তার সংসার চলে। তারা নাকি জুয়ার আড্ডা থেকে টাকা নিয়ে কোন মতে লন্ডনে বসবাস করে। এটাও আমাদের শুনতে হয়।
লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়ি, গাড়ি, কাজের লোক সবই আছে উল্লেখ করে তাদের বিলাসী জীবনের কথা জানিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কমতি তো দেখি না। কত টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে এবং প্রতিদিন এখান থেকে তাদের জন্য কত টাকা যাচ্ছে সেটাই খুঁজে বের করা দরকার। যে কত টাকা এভাবে বাইরে যাচ্ছে, পাচার হচ্ছে সেটাও আমাদের তদন্ত করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *