জনগণের কাছে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভোটারদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলে নির্বাচন নিয়ে আর কে কি বলল তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না।
তিনি বলেন, “আমাকে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে ঠিক। কার কাছে সন্ত্রাসি পার্টির কাছে? সন্ত্রাসি সংগঠনের কাছে? না, আমার জনগণের কাছে আমার জবাবদিহিতা আছে। (আমি বিবেচনা করি) জনগণের কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কি না সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
আজ সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বুথ থেকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কে কী বলছে তা নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামান না।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশ একটি সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ। এটি ছোট দেশ হতে পারে, কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। জনগণই আমাদের প্রধান শক্তি কাজেই কে কী বলে তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সব বাধা মোকাবেলা করে একটি অনুকূল নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আপনার ভোট অত্যন্ত মূল্যবান, আমরা ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি এবং আমি আশা করি দেশের সকল মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।”
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে জনগণের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “অনেক বাধা-বিপত্তি ছিল, কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে সতর্ক ছিল। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচন হয়। আর মানুষ নির্বিঘেœ ভোট দেবে এবং আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি।”
নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে আস্থা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমি আশা করি যে নৌকা মার্কার জয় লাভ করবে এবং আবার আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো। এই বিশ^াস আমার আছে, জনগণের ওপর আমার বিশ^াস আছে।”
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে দেশে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা আছে বলেই দেশের এত উন্নতি হয়েছে। আমাদের সামনে আরো কাজ আছে সেটা আমরা সম্পন্ন করতে চাই।
সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে ছোট বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্রে স্বাগত জানান।
শুক্রবার রাতে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র নির্বাচন অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করতে ট্রেনে, বাসে আগুন লাগিয়ে এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে নাশকতামূলক কর্মকা- করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা চায় না। তারা জনগণের কল্যাণে কাজ করে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসি দল তারা কখনো নির্বাচনেই বিশ^াস করেনি। এক সামরিক শাসক সংবিধান ও সেনাআইন লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এই বিএনপির সৃষ্টি করেছে। কাজেই ভোট কারচুপি, সিলমারা আর মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়াটাই তাদের চরিত্র। কাজেই এখানে সেই সুযোগটা তারা পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ২০০৮ এর যে নির্বাচন, সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করতে পারেনি। সেই নির্বাচনে ৩শ’ আসনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন আর আওয়ামী লীগ একভাবে পেয়েছিল ২৩৩টি আসন। এরপর থেকেই বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে। ভোট কারচুপি করতে পারবেনা বলেই তারা নির্বাচনে আসে না । নির্বাচন বানচাল করতে মানুষ হত্যা করে।
‘বিএনপি এর জন্মলগ্ন থেকেই ভোটের নামে প্রহসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে তিনি ‘হ্যা’ঁ ‘না’ ভোট সহ সে সময়কার বিভিন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
তিনি বলেন, আমি আবারো বলবো আজকে সকলে সুষ্ঠুভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবেন, আপনার ভোটটা অনেক মুল্যবান। এই ভোটের অধিকারের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক জেল-জুলুম-অত্যাচার-বোমা-গ্রেনেড অনেক কিছুই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। আজকে জনগণ তাদেও ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে সেটা তারা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারবে এবং নির্বাচনটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
“অর্থাৎ আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জনগণ যাকে খুশি (ভোট) দিক কিন্তু নিবাচনটা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেটাই আমরা চাই। জনগণের সব রকম সহযোগিতা চাই। আর এই নির্বাচনের সাথে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন বিশেষ করে মিডিয়াকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই,” বলেন তিনি।