উলফা অস্ত্র কেলেঙ্কারিতে বিএনপি ও তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভারতের সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তার
ভারতের একজন সাবেক সিনিয়র সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের বিএনপি এবং তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামী ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা এবং এ ধরনের অন্যান্য সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহের একটি গোপন প্রক্রিয়া চালিয়েছিল এবং কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে ছিলেন তারেক রহমান।
ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ)’র সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিংয়ের এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভূ-খ- দিয়ে এ অঞ্চলে অস্ত্র চোরাচালান সম্পর্কে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরিপূরক।
বাংলাদেশ পুলিশ ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ভারতের আসাম অঞ্চলগামী ১০ ট্রাক অস্ত্র জব্দ করে। আলোচ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং উলফা নেতা উভয়েই বলেছেন যে অস্ত্রগুলো উলফার পাশাপাশি অন্যান্য বিদ্রোহী সংগঠনের কাছে যাচ্ছিল।
সিংকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোটের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য হিসাবে ব্যবহার করে এসব অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল।
ডিআইএ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ভারতীয় জেনারেল বলেছেন যে আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার করতে অস্ত্র সংগ্রহ চক্রান্তের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন উলফা কমান্ডার-ইন-চীফ পরেশ বড়–য়া।
সিং বলেন, ‘কিন্তু তিনি (পরেশ বড়–য়া) (বাংলাদেশের) ডিজিএফআই এবং এনএসআই’র কিছু কর্মকর্তার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্রে কাজ করছিলেন তারেক রহমান (বিএনপির বর্তমান ভারগ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) এবং তখন হাওয়া ভবন (বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়) হিসাবে পরিচিত তার বন্ধুদের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
তিনি আরও বলেন,
বিএনপি-জামায়াত জোটের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো সরবরাহ করা হচ্ছিল।
চট্টগ্রাম হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের উলফা আস্তানায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য কতিপয় ‘প্রভাবশালী মহলের’ সন্দেহজনক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ২০০৪ সালের এপ্রিলে ১০ ট্রাক অস্ত্র জব্দ করা হয়, কিন্তু দৃশ্যত ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ জব্দের পর বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী চারদলীয় জোট সরকারের সময় মামলাটি কয়েক বছর ধরে স্থগিত রাখা হয়েছিল। জামায়াত ছিল সে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে তৎকালীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলাটি দুর্বল করতে সত্যকে চাপা দেওয়ার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা ছিল এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বতীকালীন সরকার মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলার রায়ে বিগত বিএনপি সরকারের দুই সাবেক মন্ত্রী, দুই সাবেক সেনা জেনারেল এবং উলফা নেতা পরেশ বড়–য়াসহ ১৪ জনের মৃত্যুদ- দেয়।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই রাজনীতিক হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং জামায়াতের আমীর এবং একই মন্ত্রিসভার সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং উলফার সামরিক শাখার পলাতক প্রধান পরেশ বড়–য়াও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের একজন।
প্রাক্তন দুই জেনারেল হলেন শীর্ষস্থানীয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-র তৎকালীন মহাপরিচালক প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-র প্রাক্তন ডিরেক্টর প্রাক্তন মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, যিনি পরে এনএসআই প্রধান হন।
বিচারক এস এম মজিবুর রহমান তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এটা রহস্যজনক যে তৎকালীন সরকার প্রধান তাকে অবহিত করার সময় নীরব ছিলেন এবং এত বড় ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাননি।’
তিনি তার পর্যবেক্ষণে আরো বলেন, এই ধরনের বৃহৎ আকারের অস্ত্র পাচার কেবলমাত্র বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারের সমর্থন পাওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছিল।