উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়নে আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে জনগণের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘উন্নয়নশীল দেশ’র মর্যাদা বাস্তবায়ন এবং ‘অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ’ শেষ করার জন্য আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেননা, অন্য কোন দলে এমন দেশপ্রেম নেই।
তিনি বলেন, ‘আজকে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে এনেছে। যেটার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই জয়ী করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগই পারবে অন্য কেউ পারবে না। কারণ, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) কোন দেশপ্রেম বা মানুষের প্রতিও কোন দায়িত্ববোধ নাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাঠে মহেশখালী আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং মানুষের জন্য কাজ করে,’ উল্লেখ করে বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর অন্য একটি দল আছে এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। এরা খুন, হত্যা, বোমাবাজী, গ্রেনেড হামলা, অর্থপাচার, অস্ত্র চোরাকারবারী-এগুলোই জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে জানে না।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে তাঁর সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে তা নবীন প্রজন্মেও অনেকেই বুঝবে না কারণ তারা দেখেনি, কোন দুরাবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজকের সম্মানজনক অবন্থানে এসেছে। আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক দেশ, কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা ক্ষমতায় আছি।
তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও আমি চাইব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আপনাদের সেবা করার ও যেসব কাজ অসমপ্ত রয়েছে সেগুলো শেষ করার সুযোগ দেবেন।
“আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন?” প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশ্নের উত্তরে উপস্থিত জনসমুদ্র সমস্বরে দুই হাত তুলে সমস্বরে সম্মতি জানায়।
দূর দূরান্ত ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চল থেকে নৌকা, ট্রলার বা পায়ে হেঁটে কষ্ট করে তাঁর জনসভায় যোগ দেয়ায় উপস্থিত জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সাম্প্রতিক মক্কা-মদীনা সফরের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে যেন আর কষ্ট করতে না হয় তারা যেন সুন্দর জীবন পায় সেজন্য সেখানে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও ড. হাছান মাহমুদ সমাবেশে বক্তৃতা করেন। আরও বক্তব্য রাখেন মহেশখালী ও কুতুবদিয়া আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার পাশা চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যে দেশ স্বাধীন করে গেছেন সেই দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় একরকম জোর করে দেশে ফেরেন তিনি। এরআগে জিয়াউর রহমান তাঁদের দেশে ফিরতে দেয়নি। ফলে ’৭৫ এ বিয়োগান্তক ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তাঁকে ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে প্রবাসে রিফিউজি জীবন কাটাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্থ বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পতম সময়ে একে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়ে যান সেখান থেকে তাঁর সরকার জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে এনেছে।
তিনি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কোন মানুষের মধ্যে যদি মনুষত্যবোধ থাকে তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় জীবন্ত মানুষগুলোকে বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়ি যানবাহন সব পুড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে পুড়িযে মারা আর সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করাটাই তাদের কাজ। আমরা উন্নয়ন করি আমরা সৃষ্টি করি। ওরা ভাঙ্গে ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন দেয়া নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে মুদ্রাস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু সেটাও নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি। খুব শিগগির মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, আমি বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু একটাই কাজ এই বাংলাদেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, উন্নত জীবন পেতে পারে যেভাবে আমার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সে বাংলাদেশই আমি গড়তে চাই। বাবার স্বপ্নটাই আমি পূরণ করতে চাই।
সব হারিয়ে এই দেশবাসীর মাঝেই তিনি বাবা-মা-ভাইয়ের স্নেহ খুঁজে পেয়েছেন উল্লেখ করে এই জনগণের জন্য তিনি যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বলেও জানান।
তিনি বলেন, “প্রয়োজনে বাবার মত বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাটাই আমার একমাত্র কাজ।”
প্রধানমন্ত্রী এরআগে সমাবেশস্থলে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫৩৪৬৭ কোটি টাকার অন্য তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মহেশখালীর মাতারবাড়িতে এক মহাসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি এ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন।
এর আগে, সকালে তিনি ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও আইকনিক ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের উদ্বোধন করেন।
ইতোমধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো হলো- বকখালী নদীর উপর সেতু, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করণ, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), উখিয়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি। চট্টগ্রামে চারটি স্কুলের একাডেমিক ভবন, ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস, পর্যটকদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদার পাড়া আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং মহেশখালীতে গোরাকঘাটা-শাপলাপুর জনতাবাজার সড়ক।
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, সেগুলো হলো-টেকনাফ বহুমুখী দুর্যোগ প্রতিরোধক আশ্রয়কেন্দ্র কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামু উপজেলার নন্দা খালিতে ১৮৪টি সেতু আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম নেভিগেশন চ্যানেলের উদ্বোধন করেন।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এলাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যানেলটির উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।