অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি: প্রধানমন্ত্রী
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আপনাদের পাশে আমরা সবসময়ে আছি। আগামীতেও নির্বাচন আসবে। এই বছরের শেষে ডিসেম্বর অথবা ২০১৪ এর জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত জনতাকে দু-হাত তুলে ওয়াদা করার আহ্বান জানালে তারা হাত তুলে ওয়াদা করেন এবং নৌকার পক্ষে স্লোগান দেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইনে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
১৪ বছরে আজকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে এদেশের উন্নতি হয়- এটা আজ সর্বজনবিদিত। একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে আসলেই আপনাদের উন্নতি হবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দেশের উন্নতি হবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান— আবারও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’ এ সময় তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেওয়ান আজমেদ তৌফিককে পরিচয় করিয়ে দেন।
বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে লুটপাট, অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন তারা চালায়। মানুষের ওপর অত্যাচার আর মানুষকে শোষণ ছাড়া আর কিছু তারা দিতে পারেনি। পারবেও না। কারণ, যাদের হাতে এ দলটির সৃষ্টি তারা কোনোদিন জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায় না, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় আসে, অবৈধ ব্যক্তির হাতে তৈরি সংগঠন— এরা তো ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল, এরা জনগণের কথা চিন্তা করে না। জনগণ কেন, তারা বাংলাদেশের কথাও চিন্তা করে না। এরা লুটাপাট করে। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে। বিদেশে পাচার করে, এখন আরাম-আয়েশে দিন কাটায়। আর দেশের মানুষ যখন কষ্ট পায়, তারা আরও কষ্ট দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। যারা মানুষের জীবনের কোনও মূল্য দেয় না। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে। যারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা করতে পারে, তারা মানুষের কোনও উন্নয়ন করতে পারে না। কাজেই বিএনপি জামায়াত বা তাদের বিশ দলীয় জোট— এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। ফসল উৎপাদন বাড়ে, মাছ উৎপাদন বাড়ে, তরি-তরকারি ফলমূল উৎপাদন বাড়ে। মানুষ খেয়ে পড়ে সুখে থাকে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।’
আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে দেশে উন্নতি হচ্ছে।’
কিশোরগঞ্জের তিন জন রাষ্ট্রপতির নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের সন্তান। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেব কিশোরগঞ্জের সন্তান। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাবেক কিশোরগঞ্জের। কিশোরগঞ্জই সব সময় রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে সারা বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।’
হাওড় অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাহেব চেয়েছিলেন এখানে একটি ক্যান্টনমেন্ট হোক। আমি সেটা তার নামেই রেখেছি। কিছুক্ষণ আগে সেটার উদ্বোধন করেছি। এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর এবং ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখানকার অনেক এলাকায় ঘুরেছি। দেখেছি, মানুষের কষ্ট। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর সেই কষ্ট দূর করার নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য।’
আগে হাওড় অঞ্চলে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাওড় অঞ্চল সব সময় অবহেলিত। আগে আমি মিঠামইন এসেছি। এখানে কোও রাস্তা ছিল না। কোনও কিছুই ছিল না। শুধু পানি আর পানি। আমার জন্য একটি রিকশা নৌকায় করে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সেই রিকশা চলারও জায়গা ছিল না। এমনই একটা অবস্থা থেকে গত ১৪ বছরে এই হাওড় অঞ্চলে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। আজকে আর সেই দুর্দিন নেই। হাওড় অঞ্চলের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। যার ফলে এই অঞ্চল আজ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। মিঠামইন থেকে করিমগঞ্জ পর্যন্ত উড়াল সেতু নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন করেছি।’
তিনি জানান, এখন থেকে হাওড় অঞ্চলে যত সড়ক হবে, তার সবই উড়াল সড়ক করে দেবো। যাতে কোনও জমি নষ্ট না হয়। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামে সারা বছর যেন মানুষ চলাফেরা করতে পারে, সেই ধরনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি চাই। আমাদের সব কাজ হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণের কথা চিন্তা করে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। দুর্গম এলাকায় সোলার প্যানেল দিয়ে আমরা বিদ্যৎ দিচ্ছি। যারা ডায়বেটিসের রোগী তাদেরকে আমরা এখন থেকে বিনামূল্যে ইনসুলিন দিয়ে দেবো। সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এ অঞ্চলের জন্য সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ণমূলক কাজ করার ফলে আজকে কিশোরগঞ্জ আর পিছিয়ে পড়া এলাকা নয়। হাওড়ের অবস্থা ছিল বর্ষাকালে নাও। আর শীতকালে পাও (পা)। এখন আর সেই অবস্থাটা নেই। এখন যাতে ১২ মাস চলাচল করতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এছাড়া হাওড়ের নদী খাল ড্রেজিং করে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, যাতে কোনও ফসলের ক্ষতি না হয়। এজন্য যেখানে বাঁধ প্রয়োজন সেটা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফসল যাতে ঠিকমতো ঘরে ওঠে, তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
স্থানীয় জনতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সিটে পরপর তিনটি নির্বাচনে আপানারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। নৌকা আমাদের প্রতীক। নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ অবহেলিত নেই। উন্নত জেলা হিসেবে উন্নীত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা উন্নতি হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এদেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ তিনি গড়ে তুলেছেন। শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করে মাত্র তিন বছর সাত মাস তিন দিন সময় পেয়েছিলেন দেশকে উন্নয়ন করার। তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণ করতে দেয়নি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাবা-মা হারানোর পর আমার বিচার চাওয়ারও অধিকার ছিলো না। মামলা করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারে আসার পর আমরা সেই বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সাজা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এদেশের মানুষ বিচারহীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবো— এটাই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য।’