বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্ককে ‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করতে সম্মত
বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে’- উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুন চীনে তার তিন দিনের দ্বিপাক্ষিক সফর শেষ করার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইটে ২৭-দফা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে আজ ভোরে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
যৌথ বিবৃতিতে, উভয় পক্ষ অভিন্ন মত প্রকাশ করেছে যে, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ, যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হল দ্রুত প্রত্যাবাসন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই দেশের নেতারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তুলতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।’ বাংলাদেশ ও চীন তাদের ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছে এবং সম্মত হয়েছে যে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য একসাথে পরিকল্পনা করতে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরেকটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশ ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ বিবৃতি নিচে দেওয়া হল:
১. চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ থেকে ১০ জুলাই, ২০২৪ পর্যন্ত চীনে সরকারি সফর করেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বৈঠক করেছেন এবং চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের জাতীয় কমিটির চেয়্যারম্যান ওয়াং হুনিংও তাঁর সাথে দেখা করেছেন। একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন এবং ব্যাপক ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
২. গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের পক্ষ চীনা পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং চীনের ঐতিহাসিক অর্জন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন যুগের প্রবর্তনের প্রশংসা করেছে।
সর্বক্ষেত্রে নিজেকে একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার এবং চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণকে সর্বক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের পথে অগ্রসর করার জন্য বাংলাদেশ চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং চীনের জাতীয় পুনরুজ্জীবনের চীনা স্বপ্নকে যথাসময়ে বাস্তবায়নের প্রতি আন্তরিক সমর্থন প্রকাশ করেছে।
চীনা পক্ষ বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
চীনের পক্ষ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনকে সাধুবাদ জানায় এবং নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দিকে বাংলাদেশের অবিচল অগ্রগতি’ অব্যাহত রাখতে সমর্থন প্রকাশ করেছে।’
৩. দুই পক্ষ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত তাদের সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছে এবং সম্মত হয়েছে যে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
দুই দেশের নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তুলতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য একসাথে পরিকল্পনা করতে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে অন্য নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৪. দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে যে-চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই সুপ্রতিবেশী ও ভাল বন্ধু। দেশ দুটি এই বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের সহস্রাব্দ পুরনো ইতিহাস ভাগভাগি করছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে, উভয় দেশের নেতাদের প্রজন্মের দ্বারা তৈরি ঐতিহ্যবাহী চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দুই দেশ সব সময় একে অপরকে সম্মান করেছে, একে অপরের সাথে একই রকম আচরণ করেছে এবং পরস্পরের সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখেছে।
পারস্পারিক বিশ্বাসকে গভীরতর করার সাথে সাথে, দুই দেশ তাদের বাস্তব সহযোগিতায় ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখেছে, এইভাবে দেশদুটির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিকভাবে উপকারী সহযোগিতার একটি চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছে।
৫. উভয় পক্ষ একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমর্থনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
চীনা পক্ষ দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, ভিশন ২০৪১-এর অধীনে পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ও স্বাধীনভাবে তার জাতীয় অবস্থার সাথে উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে জোর দেয় যে- জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলিউশন ২৭৫৮ এর কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত।
বাংলাদেশ এক-চীন নীতি ও তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে- গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষা করতে দেশটির প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনকে সমর্থন করে।
৬. উভয় পক্ষ উচ্চ-স্তরের মিথস্ক্রিয়ার গতি বজায় রাখতে ও কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে এবং বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে সফর, চিঠি বিনিময় ও বৈঠকের মাধ্যমে কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই সরকারী ও জনগণের পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান ও সহযোগিতার প্রচারে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
৭. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে চীনের সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ও ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চীন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে-তার প্রশংসা করেছে।
চীনের পক্ষ থেকে বিআরআই-তে যোগদান ও অংশ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে।
উভয় পক্ষ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতিতে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়েছে এবং একসঙ্গে পরিকল্পনা, একসঙ্গে নির্মাণ ও একসঙ্গে লাভবান হওয়ার নীতির অধীনে উচ্চ-মানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান সহযোগিতা প্রকল্পগুলোকে ত্বরান্বিত করবে, সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে প্রসারিত করবে এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবহারিক সহযোগিতায় আরও ফলপ্রসূ ফলাফলের দিকে কাজ করবে।
চীনা পক্ষ এই অঞ্চলের সুষম ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করার জন্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের সাউদার্ন ইন্টিগরেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে।
৮.উভয় পক্ষ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পের আধুনিকীকরণ, ডবল পাইপলাইন প্রকল্পের সাথে বাংলাদেশ সরকারের ফেজ–৩ (তথ্য-সরকার ৩) ও সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (তথ্য-সরকার ৩) এর জন্য আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্কের (এসএমপি) উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, ডিপিডিসি এরিয়ার অধীনে পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, পিজিসিবি-র অধীনে পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প মতো বড় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
দুই পক্ষই বাংলাদেশে ছোট আকারের পৌরসভার (পৌরসভা) জন্য টেলিটকের ৪-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ, নতুন জাহাজ সংগ্রহ, পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, নিষ্কাশন, কঠিন বর্জ্য ও ফায়েকেল স্লাজ ব্যবস্থাপনার মতো প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে ও ঢাকা শহরের দশেরকান্দি এসটিপি ক্যাচমেন্টের অধীনে সুয়ারেজ কালেকশন সিস্টেম করতে সম্মত হয়েছে।
চীন বাংলাদেশে সাবওয়ে, মেট্রোরেল ও সড়ক, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, হাসপাতাল ও পানিসম্পদ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সক্রিয় অংশ নিতে চীনা উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, ৬ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার, ৯ নম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এবং বাংলাদেশে জাতীয় জরুরি অপারেশন সেন্টারের মতো প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
চীনা পক্ষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার জন্য হাসপাতাল ও সেতু নির্মাণ এবং কনভেনশন সেন্টার সংস্কারের সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেছে।
চীনা পক্ষ “চায়না এইড”এর কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
৯. উভয় পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থায়নে সহযোগিতা গভীর করতে, চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করতে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের টাটকা আম রপ্তানির জন্য চীন সেদেশে এই পণ্যটির প্রবেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এবং চীনে পাট, চামড়া, জলজ পণ্য এবং অন্যান্য উচ্চমানের বিশেষ পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনে উচ্চমানের বাংলাদেশি কৃষিপণ্য রপ্তানির বিষয়ে যোগাযোগ আরও জোরদার করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ বাণিজ্য উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো, চায়না ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার, চায়না-সাউথ এশিয়া এক্সপো এবং অন্যান্য এক্সপোতে বাংলাদেশের অংশগ্রহনকে চীন স্বাগত জানায়। উভয় পক্ষ বাণিজ্য সহজীকরণ, সহায়তা এবং প্রকল্প বা কর্মসূচির জন্য অর্থায়নের বিষয়ে ভবিষ্যতের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে।
২০২৬ সালের পরে বাংলাদেশ এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তোরন লাভ করবে। চীনা পক্ষ একটি ক্রান্তিকালীন সময়ের জন্য বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ করযোগ্য আইটেমের উপর শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে তার সমর্থন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে কার্যকর ৯৮ শতাংশ করযোগ্য আইটেমের উপর শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা প্রদানের জন্য চীনের প্রতি সাধুবাদ জানিয়েছে।
উভয় পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ চুক্তি আপগ্রেড করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশে চীনা উদ্যোগের বিনিয়োগ প্রকল্পের অগ্রগতিতে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে চীনা প্রকল্প ও কর্মীসহ সকল বিদেশী বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও বৈধ অধিকার রক্ষা ও আগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ পক্ষ অর্থনৈতিক ও শিল্প পার্ক, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, নতুন জ্বালানি, পানি সম্পদ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, গার্মেন্টস এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চীনা উদ্যোগের আরও বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।
উভয় পক্ষ পিপিপি মডেল মাধ্যমসহ অবকাঠামো ও নির্মাণ প্রকল্পে সহযোগিতা আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ আর্থিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রা নিষ্পত্তির বর্ধিত ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ চীনা ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশে শাখা স্থাপনে স্বাগত জানায় এবং এর বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকেও অনুরূপ সুযোগ প্রদানের কথা জানায়।
১০. চীনা পক্ষ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল ও আইসিটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সহযোগিতা উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি ডিজিটাল উদ্ভাবন ল্যাব স্থাপনের যৌথ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ প্রকাশ করে।
উভয় পক্ষ ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। চীনা পক্ষ ডিজিটাল অর্থনীতি শিল্পে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নকে জোরদার করার জন্য চীনা সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলিকে উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল ও আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে ক্লাউড কম্পিউটিং-এ চীন-বাংলাদেশ উদ্ভাবনী সহযোগিতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।
চীনা পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশনকে উন্নীত করার লক্ষ্যে তথ্য শিল্প ও ডিজিটাল বাণিজ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বন্দর সহযোগিতার জন্য তার প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেছে। এসব উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ পক্ষ চীনকে প্রশংসা করে ও ধন্যবাদ জানায়।
১১. দুই পক্ষ কৃষি, আবহাওয়া, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত সুরক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষই হাইব্রিড ধান ও গম প্রজনন, রোপণ কৌশল ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরঞ্জামগুলিতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ কৃষি কমিটিকে কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে, যাতে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দুই দেশের অভিন্ন উন্নয়নকে উন্নীত করা যায়।
উভয় পক্ষই হাইড্রোলজিক্যাল পূর্বাভাস, নদী খনন, পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে চীনা পক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উভয় পক্ষই সবুজ ও স্বল্প-কার্বন উন্নয়নকে একযোগে উন্নীত করার লক্ষ্যে দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে বিআরআই আন্তর্জাতিক সবুজ উন্নয়ন জোট এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগাবে। উভয় পক্ষই জাতিসংঘের ‘সবার জন্য প্রারম্ভিক সতর্কবাণী’ উদ্যোগটি যৌথ বাস্তবায়নের জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ ও হ্রাসে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
১২. উভয় পক্ষই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা, স্বাস্থ্য পরিষেবার ডিজিটাইজেশন এবং ফার্মাসিউটিক্যালস, টিকা এবং চিকিৎসা সাজসরঞ্জামের গবেষণা ও উন্নয়নে প্রযুক্তিগত বিনিময় প্রচারের জন্য উভয় দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
১৩. উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধিতে শিক্ষাগত আদান-প্রদান এবং সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিভিন্ন স্তরে ছাত্র, শিক্ষক এবং গবেষকদের মধ্যে যোগাযোগ বিনিময়কে এগিয়ে নিতে, দুই পক্ষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই গবেষণা, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং উচ্চতর, বৃত্তিমূলক ও ডিজিটাল শিক্ষা এবং বাংলা ও চীনা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।
দুই পক্ষই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সহ-নির্মাণে চীন ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা করবে, দুই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চীনা ও বাংলা ভাষায় মেজর এবং কোর্স স্থাপনে উৎসাহিত করবে এবং উচ্চ-স্তরের ভাষা প্রতিভা গড়ে তুলতে একে অপরকে সহায়তা করবে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশে একটি লুবান ওয়ার্কশপ স্থাপনে সম্মত হয়েছে।
১৪. উভয় পক্ষ দু’দেশের সংস্কৃতি, পর্যটন, মিডিয়া, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ক্রীড়া, যুবক, মহিলা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য ২০২৫ সালকে ‘চীন-বাংলাদেশ জনগণের বিনিময় বর্ষ’ হিসেবে মনোনীত করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ চারুকলা, সংগীত, নৃত্য, থিয়েটার এবং চলচ্চিত্রে দুই দেশের শিল্পীদের মধ্যে শক্তিশালী বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়কে উৎসাহিত করবে।
উভয় পক্ষ সাংস্কৃতিক ও পর্যটন বিনিময়ের প্রচার কার্যক্রম আয়োজনে এবং পর্যটন নীতিতে যোগাযোগ, সমন্বয় এবং ব্যবহারিক সহযোগিতা জোরদার করতে একে অপরকে সমর্থন করবে।
উভয় পক্ষ সম্প্রচার, টেলিভিশন এবং অনলাইন অডিওভিজুয়াল পরিষেবাগুলিতে বিনিময় ও সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং নীতি সংলাপ, একে অপরের অনুষ্ঠান সম্প্রচার, কর্মী বিনিময় এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় সমর্থন করবে।
উভয় পক্ষই তাদের ক্রীড়া সংস্থাগুলিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিষয়ে যোগাযোগ এবং সমন্বয় বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত করবে।
উভয় পক্ষ দুই দেশের নারী সমাজের মধ্যে যোগাযোগ ও মতামত বিনিময়কে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে।
উভয় পক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্কিত সহযোগিতা জোরদার করবে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়ার মতো ক্ষেত্রগুলিতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত বিনিময়ের উপর দৃষ্টি দিবে।
উভয় পক্ষ সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজকে তার ভূমিকা পুরোপুরি পালনে সমর্থন করে এবং উভয় পক্ষের থিংক ট্যাঙ্ক এবং পন্ডিতদের মধ্যে যোগাযোগ ও সংলাপকে সমর্থন করে।
উভয় পক্ষ সাবন্যাশনাল পর্যায়ে সহযোগিতা গভীর করতে এবং সিস্টার সিটি তৈরিতে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
১৫. উভয় পক্ষ বাংলাদেশের টেকসই সামুদ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামুদ্রিক পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন, ওশান টু ক্লাইমেট সীমলেশনেস ফোরকাস্টিং সিস্টেম (ওএসএফ) এবং মেরিন হ্যাজার্ডস আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড মিটিগেশন সিস্টেমের ক্ষেত্রে সামুদ্রিক ও নীল অর্থনীতির সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। সামুদ্রিক বিষয়ে আরও মেধা বিকাশে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। উভয় পক্ষ দ্রুততম সময়ে দ্বিতীয় দফার সামুদ্রিক সহযোগিতা সংলাপ আয়োজনে সম্মত হয়েছে।
১৬. চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই এশিয়ান সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি এবং এশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। দুই পক্ষ সক্রিয়ভাবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গবেষণা ও সুরক্ষায় বিনিময় ও সহযোগিতা প্রসারিত করবে।
চীনা পক্ষ পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে এশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জোটে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সদস্য দেশ হিসেবে দেখার জন্য উন্মুখ, যাতে দুই পক্ষই এশিয়ান ইনিশিয়েটিভ কাঠামোর অধীনে কাজ করতে পারে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, প্রাচীন সভ্যতা গবেষণা, যৌথ প্রতœতাত্ত্বিক অন্বেষণ, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মেরামত এবং জাদুঘরের মধ্যে বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা।
১৭. প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কর্তৃক উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশের সাথে জিডিআই ইস্যুতে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে প্রস্তুত। সকলের জন্য শান্তি, উন্নয়ন এবং ভাগাভাগি সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চীনা পক্ষ বাংলাদেশের পক্ষে গে¬াবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গে¬াবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) উপস্থাপন করেছে।
১৮. প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে, উভয় পক্ষ সর্বস্তরে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী ও বিভাগের মধ্যে আরও বিনিময় জোরদার করতে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা এবং শান্তি বিনির্মাণ ইস্যুতে তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে।
১৯. উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক তথা বহুপাক্ষিক বিষয়গুলোতে সমন্বয় জোরদার করতে সম্মত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, নিরন্তর উন্নয়ন, মানবাধিকার, মানবতাবাদী বিষয়াদি, জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি রূপান্তর এবং পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় আরও সমন্বয়সাধন ও পরিবেশ সুরক্ষা, যৌথভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বৃহত্তর ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে।
২০. এই বছর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির ৭০ তম বার্ষিকী উদযাপন করার কথা মাথায় রেখে, উভয় পক্ষ সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক অনাগ্রাসন, পারস্পরিক অখন্ডতার প্রতি পারস্পরিক সম্মানের পঞ্চনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষ একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে এশিয়া এবং মানবজাতির জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যৌথভাবে একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে।
জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা এবং জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে বৈশ্বিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মগুলি রক্ষা করতে, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে একত্রে সমর্থন করতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তর গণতন্ত্রকে উন্নীত করতে এবং একটি সমতা ও সুশৃঙ্খলভিত্তিক বহুমাত্রিকতাবাদ এবং সর্বজনীনভাবে উপকারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উৎসাহিত করতে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
২১. উভয় পক্ষ জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং প্রক্রিয়াগুলিতে সমন্বয় ও সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।
চীনা পক্ষ ব্রিকস সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ও এসসিও-র সাথে যুক্ত হওয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানায়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘সভ্যতার মধ্যে আন্তর্জাতিক সংলাপ দিবস’ সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মান বৃদ্ধিতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রথম প্রস্তাবিত ‘কালচার অব পিস’ ফ্ল্যাগশিপ রেজোলিউশনের ২৫তম বার্ষিকীতে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান হয়।
২২. উভয় পক্ষ পুনর্ব্যক্ত করেছে যে- গাজায় চলমান গুরুতর সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার মৌলিক উপায় হল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রাসঙ্গিক রেজুলেশন অনুযায়ী অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা উচিত। উভয় পক্ষ ফিলিস্তিন প্রশ্নটি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে এবং শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
২৩. এ ব্যাপারে উভয় পক্ষের অভিমত অভিন্ন যে, মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা, সমস্ত মানবতার একটি সাধারণ কারণ এবং মৌলিক মানবাধিকারগুলোর মধ্যে জীবিকা ও উন্নয়নের অধিকারের গুরুত্ব সর্বাধিক।
উভয় পক্ষ সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সমস্ত দেশের মধ্যে মানবাধিকারের বিনিময় ও সহযোগিতাকে সমর্থন করে, তারা মানবতার সাধারণ মূল্যবোধের পক্ষে। উভয় পক্ষ মানবাধিকারের রাজনীতিকরণের বিরোধিতা করে এবং যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সমস্ত দিকগুলোর সুষ্ঠু অগ্রগতির প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২৪. বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণের দ্রুত প্রত্যাবাসনই তাদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়।
উভয় পক্ষই মিয়ানমারের সব পক্ষকে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে তাদের মতপার্থক্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব রাখাইন রাজ্যে শত্রুতা বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণের সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য আলোচনার সুবিধার্থে গঠনমূলক ভূমিকা চালিয়ে যেতে চীনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করা হয়েছে।
চীনা পক্ষ বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের কয়েক বছর ধরে করা প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ও দেশগুলির মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা অনুসরণ করে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের দ্রুত প্রত্যাবাসন অর্জনে সহায়তা করতে সংলাপের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরীসহ চীন তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
২৫. জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ- এ ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এবং এর প্যারিস চুক্তির পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিতে বহুপাক্ষিকতার কাঠামোর মধ্যে ও সমতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে অভিন্ন, কিন্তু ভিন্নতাপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ স্বক্ষমতা অনুসারে একসঙ্গে কাজ করা সকল রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য।
২৬. প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সময় উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, আর্থিক নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা সহযোগিতা, চিকিৎসা সেবা এবং জনস্বাস্থ্য, অবকাঠামো সহযোগিতা, সবুজ ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, কৃষি সহযোগিতা, জলবায়ু পূর্বাভাস এবং রেডিও ও টেলিভিশনে সহযোগিতা সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেছে।
২৭. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ও উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার ও জনগণের প্রতি তাঁর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং চীনা নেতাদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
চীনের নেতৃবৃন্দ এই আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উভয়পক্ষ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখবে।