জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ইউএন সাধারণ পরিষদের সভাপতির বৈঠক
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) সাবা কোরোসি জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ, তাৎপর্যপূর্ণ অবদান ও ফলপ্রসূ নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
তিনি গতকাল নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের পররামন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে এ প্রশংসা করেন। এ সময় সাবা কোরোসি জাতিসংঘে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন।
আজ শনিবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সকোরি তথ্য বিবরণীতে এ সংবাদ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই সভায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘এসডিজি বাস্তবায়ন রিভিউ’ বিষয়ক ইভেন্ট আয়োজন এবং সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের আওতাধীন উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ, পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি ফোরাম প্রতিষ্ঠা- এই দ’ুটি প্রস্তাব সাধারণ পরিষদের সভাপতির নিকট পেশ করেন। রোহিঙ্গা শিশুদের নিজ ভাষায় শিক্ষাদান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে, তা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে নিজভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি।
এ সময় সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গাদের আয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ সংকট কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও তিনি জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাক-মোকাবিলা ও এর প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য আরো তহবিলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা শিগগিরই বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। সাধারণ পরিষদের সভাপতি বিষয়টির প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন।
ইউএন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক: ইউএন পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার সাথে বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কুইক রি-অ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ), বেজ্ ডিফেন্স কন্টিনজেন্ট, পদাতিক কন্টিনজেন্ট এবং পুলিশ কন্টিনজেন্ট পদায়নের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ হতে সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিশেষ করে ফোর্স কমান্ডার নিয়োগের আহ্বান জানান এবং নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করেন।
এ সময় ড. মোমেন সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে টেকসই শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও উত্তম অনুশীলন কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক নারী শান্তিরক্ষীদের আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের ২৬তম কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে আমন্ত্রণ জানান।
ল্যাক্রুয়া বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা ও পেশাগত দক্ষতার প্রশংশা করেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ হতে সুদানের আবেইতে পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রেরণ, মালিতে আমড্র্ হেলিকপ্টার এবং কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স কন্টিনজেন্ট মোতায়েন, মধ্য আফ্রিকায় হাতপাতাল ইউনিট প্রেরণ এবং কঙ্গোতে এক্সপ্লোসিভ অর্ডিনেন্স ডিস্পোজাল (ইওডি) কন্টিনজেন্ট মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি প্রত্যাশা করেন, ভবিষ্যতে আরো নারী শান্তিরক্ষী মোতায়েনসহ জাতিসংঘের সার্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে অবদান রাখবে।